Blogger Widgets

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়করনের আন্দোলন

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু বের করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট উপকরণ সমূহ ব্যবহার করেন। কিন্তু তার সিংহ ভাগই ইংলিশ বা অন্যান্য ভাষায় লেখার দরুন সাধারণ বাংলা ভাষী মানুষ সেই সকল তথ্য এবং উন্নতি সম্পর্কে জানার থেকে অনেক পিছিয়ে। তাদের কে এই বিজ্ঞান ও নানা প্রযুক্তিক সম্পর্কে জানানোর জন্যই কৌতূহল।

বিজ্ঞান এর সাথে পড়ার আনন্দ যেখানে আলাদা

কল্পবিজ্ঞান থেকে প্রাচীন বিজ্ঞান সমস্ত ধরণের জনপ্রিয় বিজ্ঞানের লেখায় ভরা এই এই কৌতূহল। আছে বিভিন্ন রকম এর বিষয়। নানান রকম নতুন নতুন প্রযুক্তির খবরা-খবর। বিজ্ঞান এর ইতিহাস।

পড়ুন যেমন খুশি, যখন খুশি। পড়ান সবাই কে।

কৌতূহল হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রুপ ব্লগ। বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা ইন্টারনেটে যাতে এক জায়গায় কিছু লেখা পড়তে পারেন সেই উদ্দেশ্যে এই কৌতূহল তৈরি। আপনিও যুক্ত হতে পারেন কৌতূহল-এর সাথে।

বিজ্ঞানকে সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলো গল্পের ছলে বলে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানে উৎসাহী করা, মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক করা। দুর্বোধ্য ভাষায় তত্ত্বকথা না বলে বিজ্ঞানকে সহজ করে বোঝানো, এই উদ্দেশ্যে নিয়েই পথ চলা শুরু আমাদের।

মতামত জানান কৌতূহল-এর প্রতিটি লেখা ও অন্যান্য বিষয় কে আরও উন্নত করতে।

কৌতূহল-এর কথা জানিয়ে দিন আপনার পরিচিতদের কাছে Facebook, Twitter, email-র মাধ্যমে। কিংবা মুখেমুখে। কৌতূহল-এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে আমাদের দরজা খোলা।

Showing posts with label জীব বিজ্ঞান. Show all posts
Showing posts with label জীব বিজ্ঞান. Show all posts

লাল পিঁপড়ার অলৌকিক ক্ষমতা


লাল পিঁপড়া বা বিষ পিঁপড়া (Fire Ant) নামে পরিচিত এক পিঁপড়াদের একটি প্রজাতিতে রয়েছে চরম একতা । এই ক্ষুদ্র প্রানীদের বুদ্ধিমত্তা দেখে অনেকেই অবাক। প্রায় সব প্রজাতীর পিঁপড়াদেরই দলবদ্ধ হয়ে বসবাস ও খাদ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তবে এদের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মজার মজার অনুশীলন যা শুধু মাত্র বিপদের দিনেই দেখা যায়। কাউ আক্রমণ করার ক্ষেত্রেও একত্রিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দেখুন।
পনিতে ভেসে থাকা
একটি পিঁপড়া সহজেই জলে ডুবে যেতে পারে। তবে তারা দলবদ্ধ হয়ে জলে অনায়াসে ভেসে থাকতে পারে। বন্য জলোচ্ছ্বাস বা যে কোন কারনে তাদের ঘর বাড়ি ভেসে গেলে তারা খুব দ্রুত একে অপরের সাথে তাদের পা দিয়ে একটি জালের মতো অবস্থান তৈরী করে। যাতে করে কেউই ডুবে মারা যায় না। এমনকি সবার নিচে যে পিঁপড়াটি থাকে তারও কোন সমস্যা হয় না।
জার্জিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজীর এমলট কিছু পিঁপড়ার উপরে পর্যবেক্ষণে বিষয়টি নিশ্চত হন। পিঁপড়াদের বাসায় জল ঢালার পরে দেখা যায়-সব পিঁপড়া তাদের ডিমগুলোকে একত্রিত করে একে অপরের সাথে সবগুলো ডিমও তারা নিজেরা ধরে রাখে এবং সহজেই ভেসে থাকে।
এমন কি কোন একটি পিঁপড়া জলে ডুবে যাওয়ার পরেও তাদের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং জলের নিচে তাদের অন্যান্যরা থাকলে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে ভেসে ওঠে।
তাদের এই একতার মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি দেখে নেই

এক.

পিঁপড়াদের এলাকা বন্যায় প্লাবিত হলে তারা এভাবেই একত্রিত হয়

দুই.

একত্রিত হয়ে এখন তারা দিব্যি ভেসে বেড়াচ্ছে

তিন.

কোন গাছের কান্ড ভেঙে পড়লে সেটাকেও ভাসিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করে তারা, এবং সবাই মিলে একসাথে

চার.

জলের নিচে বাতাস আছে এমন কোন বস্তু পেলেও সেখানে তারা একত্রিত হয়, ঠিক এভাবে

পাঁচ.

পরীক্ষা করার জন্য এই পিঁপড়াটিকে জলের  নিচে সুতা দিয়ে বেধে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনও সে তার সুং গুলোকে প্রসারিত করে রেখেছে,  অন্য কাউকে পেলে একত্রিত হবে এই প্রত্যাশায়।

ছয়.

জলের উপরে হেটে চলার প্রচেষ্টা।

সাত.

নিজেরাই নিজেদের রাস্তা তৈরী করছে.. শূন্য যাওয়ার জন্য মানুষের মতোই যেন প্রচেষ্টা

আট.

হাতে হাতে বন্ধনকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে

নয়.

এবার হয়ে যাক এক কাপ পিঁপড়ার চা…
(আপাততঃ দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আপনি চা খাবেন, অথচ তারাই চা খাচ্ছে  )

উড়ন্ত টিকটিকি


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রানী জগতে সবাইকে স্বাগতম। অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও বিভিন্ন প্রানীর সাথে সবাইকে পরিচয় করার প্রয়াস চলছে অনেক আগে থেকেই। আজ উড়ন্ত টিকটিকি (Draco Lizard) সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আট ইঞ্চি এই প্রানীর শরীরটা অনেকটা ভয়ানক ও চলাফেরায় রয়েছে রাজকীয় ভাব। খুব দ্রুত এক ডাল থেকে অরেক ডালে লাফ দেওয়া ও অনেকটা বাদুরের মতো উড়াল দেওয়ার চৌকশ কৌশল আছে তাদের।এ কারনে এদের উড়ন্ত ড্রাগনও বলা হয়।

বাতাসে ভেসে বেড়ানোর জন্য তাদের দুইটি পাখা ও দ্রুত লাফালাফিতে তাদের লম্বা লেজ সহায়তা করে। এই টিকটিকি সাধারনত মাটিতে নামে না তবে মাটিতে ডিম পেরে ঢেকে রাখে। প্রজনন ও বসবাসের জন্য গভীর জঙ্গলকেই তারা ভালবাসে।
এরা সাধারনতঃ পিঁপড়া ও পোকামাকর খেয়ে জীবন ধারন করে। অনেক সময় সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রানীর খাদ্য হিসেবে তাদেরকে জীবনদিতেও হয়।  এদের সাধারনতঃ এশিয়ার ফিলিপাইন, ভারত, বাংলাদেশের গভীর বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।

নীরব ও ঘাতক “হেপাটাইটিস সি” ভাইরাস


হেপাটাইটিস এ এবং বি- এর কথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু হেপাটাইটিস সি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় হেপাটাইটিস সি আসলে নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে হেপাটাইটিস সি। কারণ এই রোগের কোন টিকা এখনো আবিস্কার হয়নি। এমনকি হেপাটাইটিস সি’র চিকিৎসার জন্য যে ঔষুধ আবিস্কার হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি রোগীর কাজে লাগে না। যেসব রোগী ঐ ঔষুধ সেবনে আগ্রহী, তাদের ঔষুধ কিনতে অনেক কাটখড় পোহাতে হয়। কারণ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে প্রতি সপ্তাহে একবার পিজিলেটেড ইন্টারফেরন নামের একটি ইনজেকশন নিতে হয় টানা এক বছর ধরে।
অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহ ধরে চলে এই চিকিৎসা। সঙ্গে রাইবাভিরিন নামের আরেকটি ঔষুধ। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের নেই। গরীব মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসার বোঝা বহন করা কখনোই সম্ভব নয়। ১৯৮৯ সালের আগে কেউ হেপাটাইটিস সি’র নামই শোনেনি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস সি-এ আক্রান্ত। এই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। হেপাটাইটিস সি মরণ রোগ হিসেবেই চিহ্নিত।

সচেতনতার অভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এক শরীর থেকে আরেক শরীরে। অনেকটা এইচআইভি’র মতো। ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ইঞ্জেকশনের সুচ, নিরাপদ নয় এমন যৌন সম্পর্কের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে নবজাতকেরও এই রোগ হতে পারে। আর মা যদি এর সঙ্গে এইচআইভি ও বহন করে, সেক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ শিশুর হেপাটাইটিস সি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত রোগীর চোখ যে সব সময় হলুদ হবে এমন নয়। মাত্র ১৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে চোখ হলুদ হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে দেখে হেপাটাইটিস সি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। হেপাটাইটিস বি-র তুলনায় এ রোগ অনেক বেশি ক্ষতিকারক। হেপাটাইটিস সি’র জীবাণু দীর্যস্থায়ী হিসাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে থেকে যায়। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে সিরোসিস প্রবল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যারা সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে বছরে ৪ শতাংশের লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নখ পর্যবেক্ষণ করে নিরূপণ করুন আপনার স্বাস্থ্য


সুস্থ্য থাকতে কে না চায় ? সুস্থ্য থাকার জন্য নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেয়াটা একান্ত জরুরী। আর এ জন্য মাঝে মাঝেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত মেডিকেল চেক আপের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় রোগ না হলে বেশির ভাগ মানুষই ডাক্তারের কাছে যান না, নিছক অর্থ নষ্ট হবে মনে করে। আবার অনেকে আলসেমী করেও চেক আপ করান না, আর অনেকেতো সময়ই পান না ব্যস্ততার জন্য। তবে যে কারণেই চেক আপ করা বিরত থাকুন না কেন, যারা চেক আপ করাতে পারছেন না, হোক সেটা সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে, তারা খুব সহজেই কোনো কোনো রোগের ব্যাপারে নিজের নিজের চেক আপ নিজেই করতে পারেন। এ কাজটি করা যায় আপনার নখ দেখে। কি, অবাক হচ্ছেন ? বন্ধুরা, অবাক হওয়ার কিছু নেই। মানুষের শরীরের বিভিন্ন রোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার হাত বা পায়ের নখের আচরণ বিভিন্ন রকম আচরন করে থাকে, অর্থাৎ, বিভিন্ন রোগের প্রভাব নখেও পড়ে যা দেখে আপনি ঐ রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।

ফ্যাকাশে নখঃ কারো কারো নখের অগ্রভাগ মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাকাশে হয়ে থাকে।

এ ধরনের নখ শরীরের নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোর লক্ষনগুলো প্রকাশ করে থাকে।
* রক্তাল্পতা
* কনজাস্টিভ হার্ট ফেইল্যুর
* যকৃত বা লিভারের রোগ
* পুষ্টিহীনতা

সাদা রঙের নখঃ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নখ সাদা রঙ ধারণ করতে পারে।

এ ধরনের নখ লিভারের সমস্যা যেমন, হেপাটাইটিস বা জন্ডিস এর ইঙ্গিত করে থাকে।

হলুদ নখঃ হলুদ নখ বিশেষ কিছু সমস্যার ইংগিত করে থাকে।


এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে ছত্রাকের আক্রমন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ক্ষত্রে নখ হ্লুদ হওয়ার পাশাপাশি নখের পুরুত্ব হ্রাস পায়। তবে কদাচিত ক্ষেত্রে হলুদ নখ আরো বিশেষ সমস্যা যেমন থাইরয়েড বা ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস বা সোরিয়াসিস এর লক্ষ হিসেবে প্রকাশ পায়।

নীল নখঃ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নখে নীল রংয়ের ছোপ দেখা যায়।
এর মাধ্যমে বুঝতে হবে আপনার শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না। আর অক্সিজের স্বল্পতা হয়ে থাকে ফুসফুসের রোগ, নিউমোনিয়া, অথবা হার্টের কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

খাদ যুক্ত নখঃ কোনো কোনো সময় আপনার নখে খাদ দেখে থাকতে পারেন।

এটা হল সোরিয়াসিস বা জ্বালাময়ী বাতের পূর্ব লক্ষণ। এক্ষেত্রে নখের নিচের চামড়া লালচে বাদামী রঙ ধারণ করে। মাঝে মাঝে নখ বিবর্ণও হয়।

ভংগুর বা ফাটল ধরা নখঃ মাঝে নখে ফাটল ধরে বা ভংগুর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

থাইরয়েডের সমস্যার কারণের এমন হতে পারে। ফাটল ধরা, ভাঙ্গা হলুদাভ নখ ছত্রাকের আক্রম্রনের ইংগিত করে।

স্ফীত কিনারা বিশিষ্ট নখঃ কোনো কোনো নখের কিনারা মাঝে মাঝে স্ফীত ও লালচে হতে পারে।

টিস্যুগত সমস্যার জন্য এটি হয়। এক্ষেত্রে উক্ত স্থানে জ্বালাপোড়াও হতে পারে।

নখের নিচে গাঢ় রেখাঃ এ ধরনের অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক অবস্থার প্রকাশ করে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

এ ধরনের নখ মেলানোমা নামের মারাত্বক স্কিন ক্যান্সারের লক্ষন প্রকাশ করে।

চিবানো-বিধ্বস্ত নখঃ নখ কামড়ানো অনেকের একটি সাধারণ পুরোনো স্বভাব।
বে মাঝে মাঝে এটি স্থায়ী দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে।

নখের হঠার আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক লক্ষন প্রকাশ অনেক ক্ষেত্রে এটি আট-দশটা সাধারণ ঘটনার মত একটি ঘটনাও হতে পারে। তবে কোনো কারণে সন্দেহ হলে সেক্ষেত্রে, চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। ধন্যবাদ সবাইকে।


পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ১০টি প্রানী


এই পৃথিবীতে সকল প্রানীরই কোন না কোন অবদান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভালো আর কিছু খারাপ। সৃষ্টি কর্তার এই সৃষ্টির সকল প্রানীর মধ্যে বিপজ্জনক প্রানীর সংখ্যাও কম নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক দশটি প্রানির মধ্যে সবার আগে আসা উচিত মানুষের নাম। কারন এর চেয়ে বিপজ্জনক আর কিছু পৃথিবীতে নেই। তবুও মানুষকে এই লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি  এখানে প্রানীগুলোকে ক্রমানুসারে ভাগ করা হয়েছে কতটি দূর্ঘটনা বা মৃত্যু এর দ্বারা ঘটে থাকে তার উপর নির্ভর করে। তাই কিছু বিপজ্জনক প্রানী অন্য কম বিপজ্জনক প্রানী থেকে পিছিয়ে রয়েছে কারন এর দ্বারা ঘটা দূর্ঘটনার পরিমান কম। এবার দেখা যাক আলোচিত এই দশ জনের মধ্যে কারা আছে …

১০. ভাল্লুক 
ভাল্লুক অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বন্ধু হতে পারে। কিন্তু বন্য ভাল্লুক গুলো? এগুলো  এতটাই বিপজ্জনক যে এই লিস্টের ১০ম স্থান অধিকার করে নিয়েছে।

ভাল্লুক দ্বারা বছরে যে পরিমান দূর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ৫-১০টি

৯. হাঙ্গর
ছোট-বড় সবাই হাঙ্গর এর নাম শুনলে ভয় পায়। বিপজ্জনক কয়েকটি হাঙ্গর নিয়ে এর আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। চলচিত্রে হাঙ্গরকে যতটা ভয়ংকর ভাবে দেখানো হয় বাস্তবে ততটা না হলেও নিঃসন্দেহে এটি একটি নোংরা খুনী।

হাঙ্গর দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ১০০টি

৮. জেলীফিস
জেলীফিস দেখতে বেশ মজার হলেও কিছু কিছু জেলীফিস ভয়ংকর বিষাক্ত। এমন কিছু জেলীফিস রয়েছে যার সংস্পর্শে এলে একজন মানুষের মৃত্যু হতে ১০ সেকেন্ড এর বেশি লাগবে না।

জেলীফিস দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ১০০টি

৭. জলহস্তী
জলহস্তী সাধারনত আফ্রিকাতে বেশি দেখা যায়। নির্মম এই প্রানীটি জলে এবং স্থলে দুই জায়গাতেই বাস করে। এটির চোয়াল ৪ ফুট পর্যন্ত খুলতে পারে। এই চোয়ালের জোর এতো বেশি যে অনেক শক্ত বস্তুকে স্লেজহ্যামার এর মত গুড়িয়ে দিতে পারে। এগুলোর ওজন হয়ে থাকে প্রায় ১ থেকে ৩ টন।

জলহস্তী দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টি।

৬. হাতি
পোষা হাতিগুলোর বন্ধুসুলভ আচরন দেখে এমনটি ভাবার কারন নেই যে এরা তেমন ভংকর নয়। অনেক সময় পোষা হাতি এর পালককে মেরে ফেলে। বন্য হাতি সম্পর্কেতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোন রকম জানান দেয়া ছাড়াই আক্রমন করে বসতে পারে এটি। আর এর আকৃতিও এর স্বভাবের সাথে মানানসই।

হাতি দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টি।

৫. কুমির
আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে বেশি দেখা যায় কুমির। এটি একটি যথেস্ট বিপজ্জনক প্রানী। দ্রুতগতি সম্পন্ন এই প্রানীটির রয়েছে হাড় গুঁড়িয়ে দেয়ার মত খুবই শক্তিশালী চোয়াল।

কুমির দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ টি

৪. বড় বিড়াল
বড় বিড়াল বলতে বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার এগুলোকে বোঝায়। এগুলো সম্পর্কে আপনারা প্রায় সবাই কম-বেশি জানেন। অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন এই প্রানীগুলোর সাথে দৌড়ানোর ঝুঁকি নেয়া নিশ্চয় কারো উচিত হবে না। যদি কখনো এমন অবস্থায় পড়েন, তাহলে ভুলেও দৌড় দেয়ার কথা চিন্তা করবেন না বরং উল্টো এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকুন আর ভাব দেখান এটিকে আপনি পরোয়াই করেন না (তবে আমি নিশ্চিত এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে আমি নিজেও ঝেড়ে দৌড় মারবো  )

বড় বিড়াল দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ৮০০ এর বেশি

৩. কাঁকড়া বিছা
আকৃতিতে ছোট হলেও বিছা খুবই বিষাক্ত। এটি মোটামুটি আক্রমনাত্নক এবং কোন কারন ছাড়াই আক্রমন করতে পারে। এর দ্বারা ঘটা দূর্ঘটানার পরিমান কম রেকর্ড হয়। কারন এই দূর্ঘটনাগুলো সাধারনত ঘটে থাকে একটু দুর্গম অঞ্চলে।

কাকড়া বিছা দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ৮০০ থেকে ২,০০০

২. বিষাক্ত সাপ
৪৫০ এর বেশি প্রজাতির সাপ বিষ বহন করে এবং এর মধ্যে ২৫০ প্রজাতির সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সাপের বিষ মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক কারন রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে এটি সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। সাপ দ্বারা সংঘটিত বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে থাকে এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকায়।

বিষাক্ত সাপ দ্বারা বছরে যে পরিমান দুর্ঘটনা ঘটেঃ প্রায় ১০০ থেকে ১,২০,০০০
এবং ….. যার জন্য সবাই এতক্ষন অপেক্ষা করছেন। মানুষের পরেই পৃথিবীর ১ নাম্বার খুনি …

১. মশা
আশা করি মশা প্রথম স্থান অধিকার করায় আমার সাথে আপনারা কেউ দ্বিমত করবেন না। মহামারী আকারে রোগ ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে এর জুড়ি মেলা ভার। আগের তুলনায় কম হলেও এখনো পুরো বিশ্ব জুড়ে ভয়ানক কিছু রোগ ছড়ানো এবং মানুষের মৃত্যুর জন্য দ্বায়ী মশা।

মশা দ্বারা বছরে যে পরিমান মানুষের মৃত্যু ঘটেঃ প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ!!

প্রানীদের অসাধারন কিছু ক্ষমতা


প্রানী জগত মানুষের কাছে বরাবরই বিস্ময়কর। প্রায় প্রতিদিনই আমরা নতুন কিছু জানছি এ জগত সম্পর্কে। রহস্যময় এ জগত সম্পর্কে যেন জানার আর শেষ নেই। যদিও সৃষ্টির সবচেয়ে উঁচু স্থানে রয়েছে মানুষ। এটা মূলত তাদের জ্ঞান বুদ্ধি এবং শারীরিক গঠন এর কারনে। তবে শারীরিক ক্ষমতার দিক দিয়ে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রানীদের চাইতে পিছিয়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রানীর কিছু বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে এবং এর মধ্যে কিছু কিছু খুবই বিস্ময়কর। চলুন এরকম কিছু প্রানী আর তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাক…
হাঙ্গর
প্রাকৃতিক ভাবেই এক দক্ষ শিকারী হাঙ্গর। এর মস্তিস্কে বিশেষ কিছু কোষ রয়েছে, যা অন্য প্রানীদের শরীর থেকে তৈরি হওয়া ইলেক্ট্রিক ফিল্ড সনাক্ত করতে পারে। তাই সমুদ্রের তলদেশে বালির নিচে লুকিয়ে থাকা ছোট একটি মাছও হাঙ্গরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না।
এমনকি পানিতে এক ফোটা রক্ত এরা সনাক্ত করতে পারে কয়েক মাইল দূর থেকে। তাই পানির নিচে কখনো হাঙ্গর দেখলে পাথর বা লতা-পাতার আড়ালে লুকানোর চেস্টা করাটা সম্পূর্ন বৃথা।
অক্টোপাস
অক্টোপাস বরাবরই মানুষের কাছে একটি রহস্যময় প্রানী। আমরা যদিও জানি এদের ৮টি পা রয়েছে, তবে এগুলো আসলে বাহু। আত্নরক্ষার জন্য এরা শরীরের রঙ বদল করে ফেলতে পারে। পালিয়ে যাওয়ার সময় দেহ থেকে এক ধরনের কালি ছুঁড়ে মারে যা পানিকে অন্ধকার করে দেয়।
এদের দেহে রয়েছে ৩টি হৃদপিন্ড। ব্লু রিংড অক্টোপাস এর দেহে রয়েছে মারাত্নক বিষ যার সংস্পর্শে মানুষের মৃত্যু ঘটা সম্ভব খুবই দ্রুত।
বাদুড়
প্রানী জগতের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি বাদুড়। আমরা সবাই জানি এরা পাখি নয়। কারন এদের দেহ লোম দিয়ে দিয়ে ঢাকা, পালক নয়। তাছাড়া এরা নিশাচর প্রানী। বাদুড়ের চোখ থাকলেও দেখার ক্ষমতা খুবই সীমিত। রাতের বেলা চলাচলের সময় এরা শব্দের প্রতিধনি ব্যবহার করে। উড়ার সময় এরা আল্ট্রাসনিক শব্দ তৈরি করে।
এরপর এই শব্দের প্রতিধনি শুনে সামনে থাকা বস্তু সম্পর্কে ধারনা লাভ করে এবং পথের নির্দেশনা পায়। তবে অনেক সময় বাদুড় বিদ্যুতের তারে ধাক্কা খায়। কারন সুক্ষ তারে শব্দ ঠিক মত প্রতিফলিত হয় না। আর বলাই বাহুল্য, আল্ট্রাসনিক শব্দ শোনার ক্ষমতা মানুষের নেই।
বোয়া
সাপ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রানীগুলোর মধ্যে একটি। মূলত এদের বিষ এবং নিঃশব্দ ও সুক্ষ চলাফেরাই এর কারন। বোয়া অন্যান্য সাপ থেকে ভিন্ন হওয়ার কারন হলো একদম অন্ধকারে না দেখেও এর শিকার করার ক্ষমতার কারনে।
এদের চোখের কাছাকাছি রয়েছে এক ধরনের অর্গান যেটি অন্য কোন প্রানীর দেহের তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে তাদের সঠিক অবস্থান নির্নয় করতে পারে। আর তাই পুরোপুরি অন্ধকারেও এরা শিকার কে খুঁজে বের করতে পারে সহজেই।
হামিংবার্ড
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও বিশেষ ক্ষমতার দিক দিয়ে কিন্তু হামিংবার্ড পিছিয়ে নেই। প্রতি সেকেন্ডে এরা ১৫ থেকে ৮০ বার এর মত পাখা নাড়তে পারে।
আর এর ফলে এরা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ঠিক হেলিকপ্টার এর মত। আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা হলো এরা পিছন দিকে উড়তে পারে, যেটি আর কোন পাখি পারে না।
বিড়াল

বিড়াল একটি ঘরোয়া প্রানী বলে এর সম্পর্কে সবারই কম বেশি জানা আছে। অসাধারন চোখের ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু প্রানীর মধ্যে বিড়াল একটি। পুরোপুরি অন্ধকারেও এরা একদম পরিস্কার দেখতে পায়।
আর তাই ঘরের ভিতর ছুটে বেড়ানো ছোট ছোট ইদুর গুলো রাতের বেলা ধরতে এদের কোন সমস্যা হয় না।
কুমির
কুমির তাদের চোয়ালের শক্তির কারনে বিখ্যাত। এদের দুই চোয়ালের মাঝের চাপ ক্ষেত্র বিশেষে এক টন! পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া এরা ইচ্ছা করে কছু পাথর গিলে থাকে যেগুলো এদের পেটে সবসময় অবস্থান করে।
এসব পাথর কুমিরদের শারিরীক ভারসাম্য রক্ষা এবং খাবার হজমে সহায়তা করে। আর বলাই বাহুল্য, এদের খাদ্য তালিকা থেকে মাছ, হরিন, জেব্রা, জিরাফ, বন্য গরু এমনকি ছোট কুমিরও বাদ যায় না!

ডাইনোসরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানা ও অজানা কিছু তথ্য


ডাইনোসর শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। শব্দটি মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি বিশালদেহী জন্তুর অবয়ব। এ নিয়ে জানার আগ্রহের কারো কোন কমতি নেই। এক সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ও বিরাট আর শক্তিশালী এ জন্তুটি পৃথিবীতে বিচরণ করেছিল প্রায় ১৬০ মিলিয়ন বা ১৬০০০০০০০ বছর যাবত। পৃথিবীতে ডাইনোসরের উদ্ভব  হয়  ২৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে(ট্রিয়াসিক যুগ) আর ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে(ক্রিটেশিয়াস-টারশীয়ারী যুগ) এর বেশীরভাগ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। আমরা বর্তমানে যে সকল পাখি দেখতে পাই, তাদেরকে ডাইনাসোরেরই কিছু প্রজাতির বিবর্তিত রূপ বলে ধারণা করা হয়। ডাইনোসরের যে সকল ফসিল বা জীবাশ্ম রয়েছে,তা থেকে বিশ্লেষিত তথ্য আমাদের এ ধারণাই দেয় যে,পাখি theropod ডাইনোসরেরই বিবর্তিত রূপ।
Dinosaur শব্দটি প্রবর্তন করেন ইংলিশ জীবাশ্মবীজ্ঞানী Richard Owen। গ্রীক শব্দ Denios এবং Sauros  থেকে এ শব্দের উতপত্তি। Denios অর্থ ভয়ঙ্কর আর Sauros অর্থ টিকটিকি। অর্থাৎ এর পুরো অর্থ ভয়ঙ্কর টিকটিকি।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ডাইনোসর ছিলো মন্থর গতিসম্পন্ন, স্বল্পবুদ্ধি ও ঠান্ডা মেজাজের প্রাণী। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটে।
ডাইনোসরদের বিভিন্ন প্রজাতি
এদের কিছু প্রজাতি ছিল মাংশাসী, কিছু ছিল তৃণভোজী, কিছু প্রজাতী দুপায়ে হাটতে পারত আবার কিছু প্রজাতি চারপায়ে হাটত। কোনোটি উচ্চতায় ছিল প্রায় ১০০ ফুট আবার কোনোটী ছিল মুরগীর সমান। এ পর্যন্ত ডাইনোসরের আবিষ্কৃত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫০০, তবে জীবাশ্ম রেকর্ডের ভিত্তিতে ১৮৫০ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাত এখনো প্রায় ৭৫% প্রজাতি আবিষ্কারের অপেক্ষায়।
অবশ্য এর পূর্ববর্তী এক গবেষণায় পৃথিবীতে ৩৪০০প্রজাতির ডাইনোসর ছিল বলে উল্লেখ করা হয় যার বেশীর ভাগেরই অস্তিত্ব বর্তমানে টিকে থাকা জীবাশ্মে নেই। ডাইনোসরের বিচরণ ছিল পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে, এমনকি এন্টার্কটিকায়ও এর অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া গেছে।
অনেক প্রজাতির ডাইনোসরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম নিচে দেয়া হলো।
Saurischia: এসব ডাইনোসরের পম্চাত ছিল সরীসৃপদের মতো।
 Theropods: এটি মাংসভোজি ডাইনোসরের দল।
Sauropods: এরা লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকত। এদের ছিল খুব লম্বা লম্বা গলা।
 Ornithischia: এরা লতাপাতা ভোজি যাদের কারো কারো পাখির মতো ঠোঁট ছিল।

Armoured dinosaurs: এদের পিঠে ছিল বড় বড় হাড় যা এদেরকে রক্ষা করত।

Ornithopoda: এরা “duck-billed” ডাইনোসর।

Pachycephalosauria: এসব ডাইনোসরের মাথা ছিল খুব শক্ত।

Ceratopsia: এরা শিংওয়ালা জাতির অন্তর্ভূক্ত।

প্রজাতিভেদে ডাইনোসরের আকার ও আকৃতিগত অনেক বিভিন্নতা ছিল।বৃহদাকার ডাইনোসরদের মধ্যে যেগুলোর নাম উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে একটি হলো Giraffatitan brancai যার উচ্চতা ছিলো ১২ মিটার(৩৯ ফুট) এবং লম্বায় ২২.৫ মিটার(৭৪ ফুট) এবং ওজন ছিলো ৩০০০০ থেকে ৬০০০০ কেজি।তাঞ্জানিয়ায় এর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়।এছাড়াও আছে T Rex যার দৈর্ঘ্য ছিল ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট।
Diplodocus প্রজাতির আরেক ধরনের ডাইনোসর ছিলো যা লম্বায় ছিলো ২৭ মিটার (৮৯ ফুট)।. এর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় আমেরিকায়। বিশালাকার তৃণভোজীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Argentinosaurus zar ওজন ৮০০০০ থেকে ১০০০০০ কেজি।এছাড়াও রয়েছে Diplodocus hallorum যা
৩৩.৫ লম্বা(১১০ ফুট),৩৩ মিটার দীর্ঘ Supersaurus ,১৮ মিটার(৫৯ ফুট) উচ্চতাবিশিষ্ট Sauroposeidon । মাংশাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম Giganotosaurus,Carcharodontosaurus এবং Tyrannosaurus

বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর এবং মানুষের আকৃতির তুলনামূলক চিত্র
ডাইনোসর বলতে যে শুধু বিশালাকার দেহের জন্তু বোঝায় তা নয়,বরং খুবই ছোট আকারের ডাইনোসরও সেসময় ছিল। সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর Anchiornis এর ওজন ছিল ১১০ গ্রাম।তৃনভোজী Microceratus এবং Wannanosaurus এর দৈর্ঘ্য ৬০ সেন্টিমিটার(২ ফুট) ।
অন্যান্য প্রানীর মতো ডাইনোসরও দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। তাছাড়া তাদের মধ্যে মাতৃসুলভ আচরণও ছিল প্রকট।  কোন কোন প্রজাতির শৈশবকাল তুলনামূলকভাবে অন্য প্রজাতির চেয়ে বেশী ছিল।
ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারন
ডাইনোসরের বিলুপ্তির সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরিভাবে জানতে পারা যায়নি। তবে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করছেন কোনো বড় আকারের উল্কাপিন্ড পৃথিবীর উপর প্রবলভাবে আঘাত হানার ফলে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়। তাদের মতে ,উল্কাটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং এর আঘাত পারমাণবিক বোমার চেয়ে এক বিলিয়ণ গুণ বেশী শক্তিশালী ছিল।
তবে কেউ কেউ মনে করেন,উল্কার আঘাতে নয় বরং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাতের ফলে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে ।
তাছাড়া খাদ্যাভাবকেও অনেকে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ মনে করেন। সেসময় মাংশাসী ডাইনোসর তৃণভোজী ডাইনোসরদের খেয়ে ফেলত বিধায় এক সময় খাদ্যাভাব সংঘটিত হয় বলে অনেকের ধারণা।
তাপমাত্রার পরিবর্তনকেও উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।অনেকের মতে সেসময় পৃথিবীব্যাপী তাপমাত্রার এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যার সাথে অভিযোজিত হতে না পেরে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়।
বিশালাকার ডাইনোসরেরা চলাফেরায় ধীর ও স্থবিরতার ফলে এবং নোংরা পরিবেশের কারণে তারা বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগের শিকার হয় এবং এভাবে এক সময় বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হয় বলে অনেকে মনে করেন।
তবে ডাইনোসরের বিলুপ্তিতে আরেকটি কারণকে প্রাধান্য দেয়া হয় তা হলো,তাদের ডিমের খোসার পুরুত্ব। পরীক্ষায় দেখা যায়,সাড়ে ছয় কোটি বছর আগের ডিমের খোসা ১২ থেকে ১৪ কোটি বছর আগের ডিমের খোসার চেয়ে যথেষ্ট পুরু ছিল। ফলে ডিমের খোসা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা বাচ্চা ডাইনোসরের পক্ষে কষ্টকর ব্যাপার ছিল।এর ফলে পরবর্তীতে ডাইনোসরের বিকলাংগতা দেখা দিত এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেত। এভাবে এক সময় তারা বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হয়।

দায়িত্বপরায়ণ মিষ্টি প্রাণী পেঙ্গুইনের উপাখ্যান


গ্রীকদের টেরা-ইনকগনিটা অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকার নাম নাম শুনলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে বরফে ঢাকা পৃথিবীর শীতলতম, শুষ্কতম আর সবচেয়ে উঁচু মহাদেশের কথা। দুর্গমতম এই মহাদেশকে উত্তরের অন্য সব মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এক বিশাল এক মহাসমুদ্র। এসবের বাধা উপেক্ষা করে যদি কোনও মতে পৌছে যেতে পারা যায় অ্যান্টার্কটিকায়, তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে অভিযাত্রীকে সাদর অভ্যার্থনা জানাতে উকিলের মত কালো কোট পরে হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে একদল পেঙ্গুইন। অ্যান্টার্কটিকার সঙ্গে পেঙ্গুইনের ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকলেও এদের মধ্যে অনেকেই এই স্থলভূমিতে থাকে কমবেশি মাত্র পঁচিশ শতাংশ সময়। বাকি সময় তারা থাকে এই স্থলভূমি সংলগ্ন সমুদ্রে। হীনবল এই আদিম পাখিরা সবসময় এমন নির্জন জায়গায় থাকতে ভালোবাসে যেখানে তাদের পক্ষে বিপজ্জনক কোনও প্রাণিদের সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। অ্যান্টার্কটিকা সংলগ্ন দ্বীপগুলিতে বেশি দেখতে পাওয়া যায় এম্পেরর, অ্যাডেলি, জেন্টো আর চিনষ্ট্রাপ পেঙ্গুইনদের। এই আদিম পাখিদের অনেক প্রজাতিকে আবার দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণ গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। গালাপাগোস পেঙ্গুইনদের আবার দেখতে পাওয়া যায় বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলগুলিতে। ছোট নীল পেঙ্গুইনদের দেখা মিলবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে। এরা আকারে পেঙ্গুইনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এদের নাম ফেরারি পেঙ্গুইন। লম্বায় ষোলো ইঞ্চি এই প্রাণীর ওজন মাত্র এক কিলোগ্রাম। সবচেয়ে বড় আকারের পেঙ্গুইন হল এম্পেরর পেঙ্গুইন। সাতাশ থেকে একচল্লিশ কিলোগ্রাম ওজনের এই প্রাণিরা লম্বায় সাড়ে তিন ফুটের কিছু বেশি হয়। সবসমেত প্রায় আঠারো প্রজাতির পেঙ্গুইন দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীতে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আরও বত্রিশ ধরণের পেঙ্গুইনদের সন্ধান পেয়েছেন যারা হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে অনেকদিন আগেই। আদিম পাখিদের অন্যতম পেঙ্গুইনরা বর্তমানে উড়তে অক্ষম হলেও এদের আবির্ভাব হয়েছিল কিন্তু উড়তে সক্ষম পাখিদের থেকেই প্রায় চারকোটি বছর আগে। পেঙ্গুইনদের পূর্বপুরুষরা আস্তে আস্তে সমুদ্রের পরিবেশকে মানিয়ে নিয়ে পরিবর্তন ঘটান তাদের পাখনার। এই পরিবর্তনের ফলে ওড়া ভুলে গিয়ে তারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে সাঁতার ও জলে ঝাঁপ দেওয়ায়।

জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে পেঙ্গুইনদের পূর্বপুরুষরাও এখনকার পেঙ্গুইনদের মত দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতো। পেঙ্গুইনদের প্রথম জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নিউজিল্যান্ডে। প্রায় চার কোটি বছরের পুরানো এই পেঙ্গুইনেরা লম্বায় ছিল চার থেকে পাঁচ ফুট। অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় পেঙ্গুইনদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে মায়োসিন যুগের অর্থাৎ প্রায় এক থেকে আড়াই কোটি বছর আগের সময়ের। এদের কারও কারও দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট আর ওজন ছিল নব্বই থেকে একশো কিলোগ্রাম। লম্বায় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট আর ওজনে একইরকমের পেঙ্গুইনের জীবাশ্মও পাওয়া গেছে সেই সময়কার। এইসব পেঙ্গুইনদের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে প্রাগৈতিহাসিক  যুগের সীল ও ছোট তিমিদের বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। একই খাবারের জন্য প্রতিযোগিতায় সীল ও তিমিদের কাছে হেরে যাওয়া এবং সীল ও তিমিদের স্বাভাবিক খাদ্যের তালিকায় পেঙ্গুইনরা অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণেই তাদের অবলুপ্তি ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করেন অনেক বিজ্ঞানী।

পর্তুগীজ অভিযাত্রী বার্থালমিউ ১৪৮৭-৮৮ সালে প্রথম পেঙ্গুইনদের দেখতে পান দক্ষিণ আফ্রিকার কেভ অফ গুড হোপের কাছ। এরপরে আরেক পর্তুগীজ অভিযাত্রী ভাস্কো-ডা-গামা ১৪৯৭ সালে আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলে পেঙ্গুইনদের দেখতে পাওয়ার কথা সরকারি ভাবে লিপিবদ্ধ করেন। ১৫২০ সালে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে পেঙ্গুইনদের দেখতে পাওয়ার কথা জানান। দু:সাহসী নাবিক ক্যাপ্টেন কুক ১৭৭২ থেকে ১৭৭৫ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ পরিক্রমনের সময়ে পেঙ্গুইনের ডাক শুনতে পেলেও তাদের দেখা পান নি। এর অনেক পরে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ডিসকভারির দ্বিতীয় অভিযানের সময় রবার্ট স্কট ও তাঁর দলবল আন্টার্কটিকায় পেঙ্গুইনদের আবিষ্কার করেন। মোট আঠারো ধরণের পেঙ্গুইনদের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার আধিবাসী চিনষ্ট্রাপ পেঙ্গুইনদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হিসাবে দেখা গেছে এদের মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ত্রিশ লক্ষ্য।

প্রাপ্ত বয়স্ক পেঙ্গুইনদের সকলেরই বুকের দিকটা সাদা ধবধবে আর পিঠ ও ডানা দুটি কালো। এ কারণে উপর থেকে দেখলে পেঙ্গুইনদের পিঠকে সমুদ্রের গাঢ় রঙের থেকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তেমনই সমুদ্রের তলার দিক থেকে দেখলে পেঙ্গুইনদের সাদা দিককেও সমুদ্রের ভিতর দিকের রঙ থেকে আলাদা করা যায় না। এই কারণে সমুদ্রে থাকা কালিন সীল, তিমি ও অন্যান্য শিকারী সামুদ্রিক প্রাণিদের পেঙ্গুইনদের অবস্থান বুঝতে অসুবিধা হয়।

সাধারণভাবে পেঙ্গুইনদের রঙ এককরম মনে হলেও, স্বতন্ত্রচিহ্ন এবং বিশেষ রঙ দেখে বিভিন্ন ধরণের পেঙ্গুইনদের আলাদা করে চিনে নেওয়া যায়। এম্পেরর পেঙ্গুইনদের চেনা যায় তাদের মাথা, থুতনি ও গলার কালো রঙ আর কানের উপর হলুদ রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখে। অন্যদিকে কিং পেঙ্গুইনদের কান থেকে বুকের উপর দিক পর্যন্ত কাটাকাটা কমলা রঙের দাগ থাকে যা দেখে তাদের চিনে নেওয়া যায়। অ্যাডেলি পেঙ্গুইনদের মাথাটা কালো হলেও তাদের সকলের থেকে আলাদা করা যায় প্রজননের সময় তাদের চোখের চারিদিকে তৈরী হওয়া সাদা বৃত্তাকার দাগ দেখে। জেন্টো পেঙ্গুইনদের আবার মাথাটা কালো হলেও চোখের পাতাগুলি হয় সাদা এবং দুটি চোখেরই উপর দিকে থাকে ত্রিভুজাকৃতি সাদা দাগ। সাধারণতঃ এই দাগ কপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। চিনস্ট্রাপ পেঙ্গুইনের মাথাটি কালো হলেও মুখোবয়বটি কিন্তু সাদা। এই সাদা মুখের থুতনি পর্যন্ত কালোদাগ এদের অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়। মাথার পাশে ঝুঁটির মত হলুদ কিংবা কমলা রঙের পালকগুচ্ছ দেখে সহজেই চিনতে পারা যায় রকহপার আর ম্যাকারনি পেঙ্গুইনদের। এদের চোখের রঙও আলাদা। লাল রঙের। হলুদ চোখের পেঙ্গুইনদের আবার বৈশিষ্ট হল তাদের এই চোখ আর মাথার গাঢ় রঙের উপর হালকা হলুদ রঙের ডোরাকাটা দাগ। ফেরারি পেঙ্গুইনদের চেনার উপায় হল এদের কালো পাখনা এবং থুতনি ও বুকের সাদা রঙ। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের পেঙ্গুইন যেমন ম্যাগলানিক আর হামবোল্টদের আবার বৈশিষ্ট্য হল মুখমন্ডলের পালকহীন মোটা অংশ আর সাদা বুকের উপর আড়াআড়ি একটি কিংবা দুটি কালো ডোরাকাটা দাগ। পেঙ্গুইনদের আবার বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠতে সময় লাগে এক বছর কিংবা কোনও কোনও সময় তার থেকেও বেশি।

রঙ যাই হোক না কেন, সব ধরনের পেঙ্গুইনদেরই মাথাটা কিন্তু বড় আর গলদেশ খুব ছোট আকারের হয়। শরীরটিও সকলের লম্বাটে ধরণের। পেঙ্গুইনদের আবার গোঁজের মত ছোট একটি লেজও আছে। সব মিলিয়ে পেঙ্গুইনদের আকৃতি এমন যে অবাধে চলাফেরা করতে এদের কোন অসুবিধা হয় না। শরীরের খানিকটা পিছন দিক করে থাকা জোড়াকৃতি পা পেঙ্গুইনদের মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে এবং চলাফেরা করতে সাহায্য করে। তাদের এই পদযুগল আকারে ছোট হলেও শরীর বয়ে বেড়ানোর পক্ষে বেশ শক্তিশালী। পেঙ্গুইনের চলে ফিরে বেড়ানোটা কিন্তু বেশ চিত্তাকর্ষক। ছোট পদক্ষেপে হেলতে দুলতে অত্যন্ত ধীরগতিতে ডাঙায় হেঁটে চলে বেড়ায় এরা। খাঁড়া জায়গায় চড়বার সময় এরা চক্ষু আর লেজের সাহায্য নেয়। লাফিয়ে উঁচু জায়গায় উঠতেও এরা খুব পারদর্শী। কোন কোন সময় জল থেকে লাফিয়ে সাত-আট ফুট উঁচু ডাঙায় দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায় পেঙ্গুইনদের। হাঁটার ব্যাপারে অত্যন্ত ধীর গতি সম্পন্ন হলেও পেটের উপর ভর করে ঘষে ঘষে শরীরকে বরফের উপর দিয়ে অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এরা।  চলাফেরায় ডাঙার থেকে জলে অনেক দ্রুত আর সাবলীল পেঙ্গুইনরা।  পেঙ্গুইনরা সাঁতার কাটার সময় তাদের পাখনাকে দাঁড় হিসাবে ব্যবহার করে। পাখিরা যেমন হাওয়া টেনে এগিয়ে যেতে পাখনাকে ব্যবহার করে, পেঙ্গুইনরাও তাদের পাখনাকে জলের মধ্যে এগিয়ে যাবার জন্য সেভাবে ব্যবহার করে। এরা সাঁতার কাটতে ডানা দুটি ব্যবহার করলেও দিক পরিবর্তনের জন্য কিন্তু এরা পা কে ব্যবহার করে।

কম শক্তি ক্ষয়ের জন্য পেঙ্গুইনরা জলের মধ্যে ডুবে সাঁতার দেওয়া পছন্দ করলেও, অক্সিজেন নেওয়ার জন্য মাঝেমাঝে তাদের মাথা জলের উপর তুলতে হয়। এ ব্যাপারে তারা শুশুকের মত জলে ডুব দেয় আর ওঠে।  নিঃশ্বাস নেওয়া ছাড়া আরেকটি কারণেও পেঙ্গুইনদের সমুদ্রের জলের উপরের স্তরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। পেঙ্গুইনরা তাদের খাবার তালিকায় যেসব সামুদ্রিক প্রাণিদের রেখেছে জলের উপরিভাগেই তাদের দর্শন মেলে।

পেঙ্গুইনদের প্রধান খাদ্য হল আন্টার্কটিকার কমলা রঙের চিংড়ি ক্রিল আর বিভিন্ন ধরণের মাছ। এম্পেরর এবং কিং পেঙ্গুইনরা কিন্তু ক্রিলের থেকে মাছ খেতে বেশি ভালবাসে। অ্যাডেলি পেঙ্গুইনদের আবার পছন্দ হল ছোট ক্রিল, অন্যদিকে চিনষ্ট্রাপ পেঙ্গুইনদের প্রথম পছন্দ হল বড় ক্রিল। অ্যান্টার্কটিকার উত্তরের দিকের পেঙ্গুইনদের প্রথম পছন্দ হল ক্রিল। খাবার শিকার করবার জন্য পেঙ্গুইনরাও বহুল পরিমাণে দৃষ্টিশক্তির উপর নির্ভর করে। চঞ্চুর সাহায্যে পেঙ্গুইনরা খাবার ধরে গিলে খায়।

সকলেরই একটি ব্যাপারে কৌতূহল আছে। অ্যান্টার্কটিকার ভয়াবহ শীতে কিভাবে বেঁচে থাকে এরা? এ ব্যাপারে পেঙ্গুইনদের সাহায্য করে তাদের দেহের শক্ত আঁশের মত পালক যা সূর্যের আলোয় ঝকঝকে করে। এই পালকগুলি আবার বিশেষ ধরণের। ছোট কিন্তু চওড়া। এগুলি আবার এমন আঁটো সাঁটোভাবে থাকে যাতে ঠান্ডা জল কিংবা হাওয়া কোনমতেই শরীরের সংস্পর্শে আসতে পারে না। পেঙ্গুইনদের পালকের সংখ্যাও অন্যান্য পাখিদের তুলনায় অনেক বেশী। প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় সত্তরটি পালক থাকে। এদের দেহে। এই ঘন পালকের স্তর এমনভাবে পালকের মধ্যে হাওয়ার স্তর তৈরী করে যা ভেদ করে ঠান্ডা হাওয়া শরীরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। এদের গায়ের চামড়ার তলায় পুরু চর্বিও শীতের হাত থেকে বাঁচতে এদের সাহায্য করে। পিঠের দিকের কালো রঙও সূর্যের তাপ শুষে নিয়ে পেঙ্গুইনদের শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে।

এসব থাকা সত্ত্বেও ঠান্ডা অসহ্য হলে এরা ঘন হয়ে জড়াজড়ি করে বসে, পরস্পরের গায়ের উত্তাপে নিজেদের গরম রাখতে। খানিক সময় বাদে বাইরের দিকে থাকা পাখিরা ভিতর দিকে থাকা পাখিদের সঙ্গে জায়গা বদল করে যাতে এক নাগাড়ে বাইরে থাকার ফলে ঠান্ডায় কেউ কাবু না হয়ে পড়ে। নিজেদের মধ্যে এই বোঝাপড়া পেঙ্গুইনদের এক সামাজিক প্রাণির স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি আরও বোঝা যায় মা-বাবা হিসাবে সন্তানদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা দেখলে।

এম্পেরর পেঙ্গুইনরা ডিম দেয় ঘোর শীতকালে যখন তাপমাত্রা শূন্যের নীচে তিরিশ-চল্লিশ ডিগ্রীর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে। এসময়ে অ্যান্টার্কটিকা সংলগ্ন সমস্ত সমুদ্রের জল জমে যায়। সমুদ্রের জমে যাওয়া এইবরফের উপরেই মা পেঙ্গুইন মাত্র একটি ডিম দেয়। বাবা পেঙ্গুইন সযত্নে সেই বড়সড় ডিমটি নিজের পায়ের উপর নিয়ে পেট দিয়ে ঢেকে বসে তার উপর তা দেয় দুমাস ধরে। এই সময় দরকার হলে ডিমটি সুদ্ধই হাঁটে বাবা পেঙ্গুইনরা যাতে ডিমটি বরফের উপর পড়ে গিয়ে ঠান্ডায় জমে নষ্ট না হয়ে যায়। অ্যান্টার্কটিকার দীর্ঘ রাত্রির অন্ধকারে ডিম নিয়ে না খেয়ে দেয়ে বসে থাকে দুমাস ধরে তারা। এরফলে এদের ওজন প্রায় কমে যায় অর্ধেক। এই দুমাস মা পেঙ্গুইনরা যায় সমুদ্রে খেয়েদেয়ে মোটা হয়ে আসতে। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনোর আগেই তারা ফিরে আসে নিজেদের জুড়ির কাছে। ডিম ফুটলে মা পেঙ্গুইনরা বাচ্চাকে নিজের দু পায়ে নিয়ে নেয় আর নিজের আধখাওয়া খাবার গলা থেকে বার করে খাওয়ায়। ঐ সময় বাবা পেঙ্গুইনরা চলে যায় সমুদ্রে খাবার সংগ্রহ করতে। বাচ্চা এম্পেরর পেঙ্গুইনরা বড় হয় খুব আস্তে আস্তে। দীর্ঘ শৈশবের প্রথম দু-তিন মাস প্রচন্ড শীতের সময়টা তারা কাটিয়ে দেয় মায়ের কোলে। পরের শীতকাল আসবার আগেই শীতকে রোখার মত চর্বি এবং পালক তৈরি হয়ে যায় তাদের। এম্পেরর শিশুর বয়স দুমাস হলেই বাবা মা দুজনেই যায় সমুদ্রে খাবার সংগ্রহ করতে। এ সময় বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে জড়াজড়ি করে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই চালায়। যদি কোন পেঙ্গুইন খাবার সংগ্রহে না যায়, তবে নিজেদের গায়ের উত্তাপ দিয়ে বাচ্চাদের সাহায্য করে তারা। অ্যাডেলি পেঙ্গুইনরা ডিম দেওয়ার সময় হল কুমেরুর গ্রীষ্মকাল। ডিম দেওয়ার জন্য অ্যাডেলি পেঙ্গুইনদের দরকার লাগে পাথুরে জমির। সেখানে তারা ছোট ছোট নুড়ি সংগ্রহ করে বাসা বানায় ডিম দেওয়ার জন্য। সেগুলিকে রুকারি বলে।

শান্ত এই প্রাণীরা খুবই মিশুকে। এরা মানুষকে একেবারেই ভয় পায় না। নিজেদের মধ্যে এরা অবশ্য গালগল্প, পরস্পরকে আদর, ডানা ধরাধরি করে হাঁটা এমন কি ঝগড়াও করে। এদের ঝগড়া করবার ভঙ্গিটি খুবই আকর্ষণীয়। পরস্পরের দিকে গলা বাড়িয়ে ধেয়ে গিয়ে মুখ কাছাকাছি হলে আকাশের দিকে মুখ তুলে এরা চীৎকার করে ঝগড়ার সময়।

পেঙ্গুইনরা নিজেদের মধ্যে সংবাদ আদান প্রদান করে বিভিন্ন ধরণের চীৎকারের মাধ্যমে। এর মধ্যে তিন ধরণের চীৎকার প্রধান। এদের এক ধরণের চীৎকার এক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। সমুদ্রে নিজেদের এলাকার অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য পেঙ্গুইনরা এই ধরণের ডাক দেয়। নিজেদের আলাদা পরিচিতি বোঝাবার জন্য এরা আরেক ধরণের ডাক দেয়। অন্য এক ধরণের চীৎকার পেঙ্গুইনরা করে বিপদের গন্ধ পেলে অন্য সকলকে সতর্ক করার জন্য। এদের বিপদ আসে সাধারণতঃ সমুদ্রের সিংহ, সীল, হাঙর এবং খুনি তিমিদের কাছ থেকে। প্রতি বছর ভাল সংখ্যক পেঙ্গুইনদের প্রাণ দিতে হয় এইসব আক্রমণে। এছাড়া শীতের সময় খাদ্যের অভাবে এবং প্রচন্ড শীতের দাপটে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ শিশু পেঙ্গুইবের মৃত্যু ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেলে পেঙ্গুইনরা পনেরো থেকে কুড়ি বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

প্রাণী হিসাবে পেঙ্গুইনরা সারা পৃথিবীতেই খুব জনপ্রিয়। এদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু চলচ্চিত্র আর গল্প। অনেক কার্টুন আর তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে এদের নিয়ে। ১৯৮৬ সালে সিলভিও ম্যাজ্জোলার পেঙ্গুইনদের নিয়ে তৈরি নাটক ‘পিঙ্গু’ বহুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে সম্প্রচারিত হয়েছিল দূরদর্শনে। জনপ্রিয়ও হয়েছিল খুব। কে না জানে ‘পেঙ্গুইন’ নামের প্রকাশক সংস্থার কথা। এসব শুনে তোমাদেরও নিশ্চয় এদের দেখবার প্রবল একটা ইচ্ছা হচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে এদের দেখতে হলে যেতে হবে অনেক দূরে দক্ষিণ মেরুর দিকে। এর জন্য যেমন তোমাকে হতে হবে সাহসী, তেমনই হতে হবে পরিশ্রমী স্লেজ টেনে নিয়ে যাবার জন্য। এমনটা হতে পারলে অবশ্য মিষ্টি এই প্রাণীদের দেখা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত হিসাবে হয়তো পেয়ে যেতে পারো পেঙ্গুইনের একটি ডিম, অবশ্য তা যদি হয় তোমার আকাঙ্খার বস্তু।

সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে ?


নাম তার সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলেই এমন নামকরণ। কিন্তু কেন এই ফুলটি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে?
গাছের বৃদ্ধি ও শারীরিক কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন ধরণের হরমোন সাহায্য করে। এমনি একটি হরমোন হল অক্সিন। অক্সিন হরমোনের নানা ধরণের কাজের মধ্য রয়েছে কান্ড ও পাতার বৃদ্ধি। এই অক্সিন হরমোনই আবার ফটোট্রপিক ক্রিয়ার জন্য দায়ী। আলোর সাথে উদ্ভিদের যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাই-ই হল ফটোট্রপিক ক্রিয়া।

অক্সিন হরমোনের যে পাশে সূর্যের আলো পড়েনা অর্থাৎ যে পাশে ছায়া থাকে সে পাশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি উদ্ভিদের যে অংশে থাকে সেখানে pH এর পরিমান কমিয়ে দেয়। ফলে এর সেলুলোজ কোষগুলো ফেটে যায়। ফলে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপই সূর্যমুখী ফুলকে সূর্যের দিকে ঘুরতে বাধ্য করে। পরিপূর্ণ সূর্যমুখী ফুল কিন্তু ঘুরে না, পূর্বদিকে মুখ করে রাখে।

বিরক্তিকর ভনভন !



আপনি হয়তো আরাম করে বসে আছেন অথবা শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ চালাচ্ছেন। হঠাৎ কানের কাছে এসে মশা ভনভন করা শুরু করল। মেজাজটা কেমন বিগড়ে যায় তখন বলুন তো? আচ্ছা, মশা কেন কানের কাছে এসেই এত ভন ভন করে ?? তখন কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছা করে না ??



মশা কিন্তু আসলে ইচ্ছা করে কানের কাছে ভন ভন করে না। মশা কানের কাছে এলে আমরা যে শব্দটা শুনি, সেটা আসলে মশার ডানা ঝাপ্টানোর শব্দ ! মশা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপ্টায় । এতো বেশিবার ডানা ঝাপ্টায় বলেই আমরা একরকম ভনভন শব্দ শুনি।

তাছাড়া প্রায়ই দেখা যায়, মশা  আমাদেরকে কামড়ে চলে যাওয়ার পর আমরা কষে একখান চড় মারি, কিন্তু মশা মরে না, বরং নিজেরাই ব্যথা পাই। কেন আমরা একটু আগে মশার কামড় টের পাই না? এর কারণ হলো, মশারা গায়ে বসেই হুল ফোটায় না। তাদের শরীর এত হালকা যে, ওরা যদি তাদের ছয় পা বিছিয়ে পাঁচ-ছয় মিনিটও শরীরের চামড়ার ওপর বসে থাকে, টের পাওয়া যাবে না। কামড়ানোর আগে ওরা মিনিট খানেক চুপচাপ বসে থাকে। হুল পিচ্ছিল করার জন্য মুখে লালা আনে। এর পর হুল ফুটিয়ে মিনিট তিনেক ধরে রক্ত চুষে নেয়। পেট ভরে গেলে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডে হুল বের করে উড়ে যায় ডিম পাড়ার জন্য। লালার কারণে গায়ের চামড়া কিছুটা অবশ হয় বলে মশার কামড় সহজে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু লালার একটি উপাদান রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। এই উপাদানটির জন্য কারও কারও চামড়ায় (বলতে পারেন সবার ক্ষেত্রেই) অনেক সময় অ্যালার্জি হয়, চুলকায়। তখনই মনে হয় মশা কামড়াচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে মশা রক্ত খেয়ে উড়ে গেছে!

আর একটি কথা, আপনারা জানেন কি, (যদিও ব্যাপারটি আগে খানিকটা ইঙ্গিত করেছি) শুধুমাত্র মহিলা মশাই আমাদের শরীরে হুল ফুটিয়ে রক্ত চুষে খায়। পুরুষ মশারা এব্যাপারে একদম নির্বিকার। আসলে মশা মানুষকে কামড়ায় তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য। মহিলা মশার ডিম পাড়ার জন্যে রক্তের দরকার, আর সেই জন্যেই তারা মানুষকে কামড়ে একটু রক্ত নিয়ে নেয়।তারপরে উড়ে গিয়ে ডিম পাড়ে। তবে মশার সবচেয়ে পছন্দ গরু-মহিষের রক্ত; তারপরে মানুষের রক্ত।

 
back to top