Blogger Widgets

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়করনের আন্দোলন

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু বের করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট উপকরণ সমূহ ব্যবহার করেন। কিন্তু তার সিংহ ভাগই ইংলিশ বা অন্যান্য ভাষায় লেখার দরুন সাধারণ বাংলা ভাষী মানুষ সেই সকল তথ্য এবং উন্নতি সম্পর্কে জানার থেকে অনেক পিছিয়ে। তাদের কে এই বিজ্ঞান ও নানা প্রযুক্তিক সম্পর্কে জানানোর জন্যই কৌতূহল।

বিজ্ঞান এর সাথে পড়ার আনন্দ যেখানে আলাদা

কল্পবিজ্ঞান থেকে প্রাচীন বিজ্ঞান সমস্ত ধরণের জনপ্রিয় বিজ্ঞানের লেখায় ভরা এই এই কৌতূহল। আছে বিভিন্ন রকম এর বিষয়। নানান রকম নতুন নতুন প্রযুক্তির খবরা-খবর। বিজ্ঞান এর ইতিহাস।

পড়ুন যেমন খুশি, যখন খুশি। পড়ান সবাই কে।

কৌতূহল হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রুপ ব্লগ। বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা ইন্টারনেটে যাতে এক জায়গায় কিছু লেখা পড়তে পারেন সেই উদ্দেশ্যে এই কৌতূহল তৈরি। আপনিও যুক্ত হতে পারেন কৌতূহল-এর সাথে।

বিজ্ঞানকে সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলো গল্পের ছলে বলে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানে উৎসাহী করা, মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক করা। দুর্বোধ্য ভাষায় তত্ত্বকথা না বলে বিজ্ঞানকে সহজ করে বোঝানো, এই উদ্দেশ্যে নিয়েই পথ চলা শুরু আমাদের।

মতামত জানান কৌতূহল-এর প্রতিটি লেখা ও অন্যান্য বিষয় কে আরও উন্নত করতে।

কৌতূহল-এর কথা জানিয়ে দিন আপনার পরিচিতদের কাছে Facebook, Twitter, email-র মাধ্যমে। কিংবা মুখেমুখে। কৌতূহল-এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে আমাদের দরজা খোলা।

Showing posts with label মহাকাশ বিজ্ঞান. Show all posts
Showing posts with label মহাকাশ বিজ্ঞান. Show all posts

সৌরজগতের সবেচেয়ে ছোট গ্রহ ‘বুধ’


বুধ গ্রহের ইংরেজী Mercury বা মার্কিউরী। বুধ হচ্ছে সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ। সূর্যের খুব কাছে হওয়ার ফলে বুধ পৃষ্ঠ থেকে সূর্যের দিকে তাকালে সূর্যকে পৃথিবীতে যত বড় দেখায় তার চেয়ে আড়াইগুণ বড় দেখা যাবে। সেই সাথে সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ হচ্ছে এই বুধ গ্রহ। এই কারণে বুধের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও অনেক কম, পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ফলে পৃথিবীতে যদি আপনার ওজন ৭০ কেজি হয় তাহলে বুধে আপনার ওজন হবে প্রায় ২৩ কেজি। বুধগ্রহের কোনো উপগ্রহ নেই। গ্রহটির কোনও স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডলও নেই। এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে অর্থাৎ পৃথিবীর হিসাবে মাত্র ৮৮দিনেই বুধের ১বছর পূর্ন হয়ে যায়, যেখানে পৃথিবীর লাগে ৩৬৫দিন।
মেরিনার ১০ কর্তৃক তোলা বুধের ছবি


বুধ দীর্ঘ ১৭৬ দিনে একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে, অর্থাৎ পৃথিবীর ১৭৬দিনে বুধের ১দিন সম্পন্ন হয়, যখানে পৃথিবীর সময় লাগে মাত্র ২৪ ঘন্টা।। অন্যদিকে এর উজ্জ্বলতার আপাত মান ২.০ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর আয়তন অন্যাতন্ত ক্ষুদ্র ও সূর্যের খুব নিকটে হওযায় পৃথিবী থেকে একে খালি চোখে অত্যান্ত কঠিন। সুর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক দূরত্ব হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। তাই শুধু মাত্র সকাল ও সন্ধ্যায় একে দেখাতে পাওয়ার ক্ষিন সম্ভাবনা থাকে। বুধ গ্রহটি সম্বন্ধে তুলনামূলক অনেক কম তথ্য জানা গেছে। কারণ এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র দুটি অভিযান চালানো হয়েছে বুধের দিকে। এই দুটি অভিজানের একটি হচ্ছে- নভোযান “মেরিনার ১০”, যা ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে অভিযান চালায়। আর আরেকটি হচ্ছে- “মেসেঞ্জার” যা ২০০৪ সালের আগস্টের ৩ তারিখে প্রেরিত হয়। অপর আরেকটি অভিজানের প্রস্তুতি চলছে, জাপান ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাথে যৌথভাবে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছে যা বেপিকলম্বো নামে পরিচিত। এটি ২০১৩ সালে প্রেরন করা হবে বুধের উদ্দেশ্যে।

বুধের নামকরণ

সেই আদিকাল থেকেই এই গ্রহের ভারতীয় নাম “বুধ” -ই ছিল। ভারতীয় পুরান অনুযায়ী বুধ হল চন্দ্রের ছেলের নাম। অন্যদিকে রোমানরা এই গ্রহের নামকরণ করেছিল তাদের ক্ষীপ্রগতি বিশিষ্ট বার্তাবাহক দেবতা মার্কিউরির নামানুসারে। পৌরাণিক কাহিনীতে মার্কারি হল জুপিটার ও মেইয়ার পুত্র। ভেরের আকাশে ও গোধূলি লগ্নের আকাশে বুধকে অতি দ্রুত গতিতে চলতে দেখা যায় বলেই সম্ভবত এই নামকরণ করা হয়েছে।

বুধ গ্রহের পৃষ্ঠ দেশ

বুধের ভূ-ত্বকের পুরুত্ব ১০০ – ২০০ কিমি-এর মধ্যে। সৌরজগতের সমস্ত গ্রহের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে ছোট; বিষুবীয় অঞ্চলে এর ব্যাস মাত্র ৪৮৭৯ কিমি। এখন পর্যন্ত প্রপ্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ আর চিত্রের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে বুধ গ্রহের পৃষ্ঠদেশ অনেকাংশেই আমাদের চাঁদের মত। বুধ গ্রহের পৃষ্টদেশ চাঁদের মতোই সাগর এবং খাঁদের অস্তিত্য রয়েছে। ধারনা করা হয় বুধ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। তবে আদিতে এই গ্রহটিতেও আগ্নায়গিরী সক্রিয় ছিলো। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন সেই আগ্নায়গিরীর লাফা স্রতের পথটিকে।

আরো ধারোনা করা হয় চাঁদের মতোই সৃষ্টির পরপরই বুধ গ্রহে বিপুল পরিমাণ ধূমকেতু এবং গ্রহাণু আঘাত হানে। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে সেই আঘাতের ঘনঘটার সমাপ্তি ঘটে ঠিকই কিন্তু আঘাতের এই সময়টিতে বুধের সমগ্র পৃষ্ঠদেশ আক্রান্ত হয় আর সেই ক্ষত চিহ্ন আজও রয়ে গেছে বুধের পৃষ্ঠ দেশে।
বড় কোনো ধুমকেতুর আঘাতে তৈরি হয়েছে বুধের এই ক্ষত, যেকান থেকে চারপাশে ছড়িয়েপরেছে বস্তুপিণ্ড। বুধ গ্রহে রয়েছে অনেক খাঁদ। এই খাঁদ গুলি কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়।
এখন পর্যন্ত জানা মতে সর্ববৃহৎ খাঁদটির ব্যাস প্রায় ১৩০০ কিমি।

বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডল

আগেই বলেছি বুধ গ্রহ খুবই ক্ষুদ্র। তাই বুধ গ্রহের পক্ষে কোন দীর্ঘ মেয়াদের বায়ুমণ্ডল গঠন ও তা ধরে রাখা সম্ভব নয়। গ্রহটি ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ বল খুবই কম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বুধেরও অতি সূক্ষ্ণ ও হালকা দুর্বল একটি বায়ুমণ্ডল রয়েছে যার প্রধান উপাদান হচ্ছে: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম। দুর্বল বায়ুমণ্ডলের কারণে বুধের আকাশ প্রায় সবসময়ই কালো দেখা যাবে। আর তাই দিনের বেলাতেও বুধের আকাশের দিকে তাকালে অসংখ্য তারা দেখা যাবে। তাছাড়া এই বায়ুমণ্ডলটি সুস্থিত নয়। বায়ু মণ্ডলের পরমাণুগুলো নিরন্তরভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এবং আবার বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্টি হয়ে শূন্যস্থান পূরণ করে নিচ্ছে। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণু সম্ভবত সৌর বায়ু থেকে উৎপন্ন হয়ে বুধের চুম্বক গোলকে আটকে যায়। কিন্তু পরে আবার এগুলো মহাশূন্যে হারিয়েও যায়। বুধের ভূ-ত্বকে বিদ্যমান পদার্থগুলোর তেজস্ক্রিয় ভাঙন হিলিয়ামের একটি উৎস। আবার এই ভাঙন থেকেই সোডিয়াম এবং পটাসিয়ামও সৃষ্টি হয়। বুধে সম্ভবত বাষ্পও রয়েছে। এর পৃষ্ঠের সাথে ধূমকেতুগুলোর সংঘর্ষের কারণে এই বাষ্পের সৃষ্টি হয়।

বুধ গ্রহের তাপমাত্রা

বুধগ্রহের তাপমাত্র আমাদের পৃথিবীর মতো স্থিতিশীল নয়। কারণ পৃথিবীর মতো বুধে কোনো বায়ু মণ্ডল নেই। বুধ গ্রহের পৃষ্ঠদেশের গড় তাপমাত্রা ৪৫২ কেলভিন বা ৩৫৩.৯ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ১৭৮.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় টিন ও সীসা পর্যন্ত গরে যেতে পারে। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনের পর্যন্ত উঠানামা করে থাকে। এই হিসাব থেকে বুঝা যায় বুধ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কে পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। একেতো বুধের কোন বায়ুমণ্ডল নেই, তার উপর আবার পৃথিবীর তুলনায় বুধ পৃষ্ঠে সূর্য রশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশী। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি সৌর ধ্রুবক রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গমি.।. বুধের বায়ুমণ্ডরের অভাবে এই তাপমাত্রা রাতে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত নেমে যায়। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে অর্ধসৌর বিন্দু এবং শীতলতম স্থান হল এর মেরুর নিকটে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্ন বিন্দু।
মজার বিষয় হচ্ছে বুধ পৃষ্ঠের এত উচ্চ তাপমাত্রা থাকা স্বত্তেও বুধ গ্রহে বরফ থাকতে পারে। বুধের মেরুর নিকটে অবস্থিত কিছু গভীর খাঁদের সমতলে সূর্য রশ্মি কখনও সরাসরি পৌছায় না। এতে সেখানকার খাঁদগুলির তাপমাত্রা সবসময়ই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। এর ফলে সেখানে বরফের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানীদের প্রেরিতো রাডার সংকেত বুধ গ্রহের মেরুর সন্নিকটে অবস্থিত বরফ খণ্ড থেকে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। তবে এই সংতেক প্রতিফলনের কারণ বরফ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি বরফ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। ধারনা করা হয় বুধ গ্রহের মেরুর সন্নিকটে অবস্থিত খাঁদগুলিতে বরফের আবরণের পুরুত্ব মাত্র কয়েক মিটার। আশা করা হচ্ছে সেখানে ১০^১৪ থেকে ১০^১৫ কেজির মত বরফ রয়েছে। পৃথিবীর ও মঙ্গলের সাথে এই বরফের পরিমাণের তুলনা করলে দেখা যাবে- পৃথিবীর এন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ ৪×১০^১৮ কেজি আর মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পরিমাণ প্রায় ১০^১৬ কেজি। বুধ গ্রহে বরফের উৎপত্তির কারণ এখনো অজানা, তবে দুইটি সম্ভাব্য কারণ ব্যথ্যা করা হয়।
১. গ্রহের অভ্যন্তরভাগ থেকে পানির চুয়িয়ে চুয়িয়ে বেরিয়ে আসা এবং ঠান্ডায় জমে বরফে পরিন্ত হওয়।
২. ধূমকেতুর সাথে সংঘর্ষের ফলে জমা হওয়া পানি ও অন্যান্য বস্তু থেকে বরফের উপাদান।

বুধের অভ্যন্তরীন গঠন

সৌর জগতের গ্রহগুলির মধ্যে চারটি গ্রহ কঠিন বস্তু দ্বার গঠিত, এদেরকে পার্থিব গ্রহ বলা হয়। পার্থিব গ্রহগুলির আকারের তুলনা, বাম দিক থেকে বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মোঙ্গল গ্রহ।
বুধ চারটি পার্থিব গ্রহের একটি অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত কঠিন পৃষ্ঠদেশ রয়েছে। বুধের যেসমস্ত উপাদান দিয়ে গঠিত তার মধ্যে ৭০ ভাগ ধাতব আর বাকি ৩০ ভাগ সিলিকেট জাতীয়। বুধের ঘনত্ব সৌর জাগতিক বস্তসমূহের ঘনত্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি; পৃথিবী থেকে সামান্য কম। আমাদের সৌর জগতের অন্যান্য বৃহৎ গ্রহগুলোর যে কোনটির তুলনায় বুধে লৌহের পরিমাণ অনেক বেশী। বুধ যদিও ছোট একটি গ্রহ তথাপিও এর কেন্দ্রকণা পৃথিবী বা অন্য যে কোনো বড় গ্রহের তুলনার অনেক বড়। এই কেন্দ্রটি লৌহ কেন্দ্র । বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২ ভাগই হচ্ছে এর কেন্দ্র। যেখানে পৃথিবীর কেন্দ্র মাত্র ১৭%।

কক্ষপথ ও ঘূর্ণন

প্রধান গ্রহগুলোর মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে উৎকেন্দ্রিক। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ৪৬,০০০,০০০ থেকে ৭০,০০০,০০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। নিজের কক্ষপথে চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৮৮ দিন। চিত্রটিতে বুধের কক্ষপথের উপর উৎকেন্দ্রিকতার প্রভাব দেখানো হয়েছে।

অনুসূরের অগ্রগমন

আমরা জানি বুধের আবর্তন কাল ৮৮ দিন। কিন্তু পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায়, এর কক্ষপথের ধীর পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনটির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে বুধের অনুসূর বিন্দুর পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই ঘটনাটি বুধের অনুসূরের অগ্রগমন নামে চিহ্নিত। এর পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ১ডিগ্রী৩৩’২০”।. এই অগ্রগমনের একটি কারণ হচ্ছে ভূ-কক্ষের বিষুবন বিন্দুর অগ্রগমন। এই কারণটিই মুখ্য। এছাড়া শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ অগ্রগমনের কারণ হচ্ছে অন্যান্য গ্রহের আকর্ষণ। প্রতি একশ বছরে বুধের অনুসূর বিন্দু ৪৩ পরিমাণ অগ্রসর হয়। নিউটনীয় বলবিজ্ঞানের সাহায্যে এর কোন ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয় নি। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন বুধ ও সূর্যের মাঝখানে অন্য কোন গ্রহ আছে। পরবর্তীতে আলবার্ট আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলেন, সূর্যের অবস্থিতির জন্য স্থান-কাল মহাশূন্যে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ নিউটনীয় নীতি এই বক্রতারই ফল। সূর্যের চারদিকে উক্ত বক্রপথে যেতে বুধের কক্ষের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে এর অনুসূর বিন্দুর অগ্রগমন ঘটে। এই তত্ত্ব অনুসারে অগ্রগমনের পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ৪৩.০৩ যা মূল পরিমাণের সাথে সুন্দরভাবে মিলে যায়। তাই বুধের অনুসূরের অগ্রগমন বর্তমানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের একটি প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

বুধ গ্রহ পর্যবেক্ষণ

বুধ গ্রহের আপাত মান ২.০ (লুব্ধক-এর চেয়ে বেশী) থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকে। সূর্যের অতি নিকঠে অবস্থিত বলে একে পর্যবেক্ষণ করা বেশ দুঃসাধ্য। কারণ সূর্যের অত্যুজ্জ্বল আলোর কারণে অনেকটা সময় বুধকে দেখাই যায় না। ভোর বা সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোতেই কেবল বুধকে দেখা যায়। হাবল মহাশূন্য দূরবীন বুধ গ্রহকে কখনই পর্যবেক্ষন করতে পারে না। নিরাপত্তার কারণেই হাবল দূরবীনকে সূর্যের দিকে ফোকাস করা হয়না। পৃথিবী থেকে যেমন চাঁদের কলা দেখা যায়, তেমনি বুধেরও কলা রয়েছে।

কিন্তু নবীন এবং পূর্ণ থাকা অবস্থায় বুধকে দেখা যায় না। কারণ এ সময় এই গ্রহটি সূর্যের সাথেই উদিত হয় এবং অস্ত যায়। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে বুধ গ্রহকে ভালভাবে দেখা যায়। দক্ষিণ গোলার্ধের যে দেশগুলো থেকে বুধ গ্রহকে স্পষ্ট দেখা যায়ৱএর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা এবং নিউজিল্যান্ডের মত দেশগুলো। অবশ্য একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় অন্যান্য কয়েকটি গ্রহ এবং উজ্জ্বল তারার মত বুধ গ্রহকেও স্পষ্ট দেখা যায়।
বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম পৃথিবী থেকে দূরবীনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, সপ্তদশ শতাব্দীতে। তিনি শুক্র গ্রহের কলা পর্যবেক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন; কিন্তু তার দূরবীনটি বুধের কলা দেখার মত শক্তিশালী ছিল না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে একটি অতি বিরল ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর সাপেক্ষে একটি গ্রহ অন্য একটি গ্রহের সামনে এসে পড়ে এবং এর ফলে একটি গ্রহ অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনাটিকে অদৃশ্যকরণ বলে। কিন্তু বুধ এবং শুক্র গ্রহ কয়েক শতাব্দী পরপরই একে অপরকে অদৃশ্য করে দেয়। শুক্র কর্তৃক বুধ গ্রহের পরবর্তী অদৃশ্যকরণের ঘটনা ঘটবে ২১৩৩ সালে।

বুধের উদ্দেশ্যে প্রেরিত সন্ধানী যান সমূহঃ

বুধের উদ্দেশ্যে পৃথিবী থেকে প্রেরিত একটি মহাকাশযানকে সূর্যের মহাকর্ষীয় বিভব উৎসের দিকে অবশ্যই ৯১ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে হবে। বুধের নিকট দিয়ে অতিক্রমকারী একটি Hohmann transfer orbit-এর ভিতর প্রবেশ করতে হলে সন্ধানী যানটিকে একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ অর্জন করতে হবে।
পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরোবার সময় এর বেগ থাকে পৃথিবীর কক্ষীয় বেগের সমান অর্থাৎ প্রায় ৩০ কিমি/সে। বুধের পাশের Hohmann transfer orbit-এ প্রবেশ করতে যে বেগ প্রয়োজন তা অর্জনের জন্য এক্ষেত্রে বেগের প্রচুর পরিবর্তন করতে হয়, যতটা অন্য কোন গ্রহে অভিযানের ক্ষেত্রে করতে হয়না। এজন্যই বুধ অভিযান অন্যান্য অভিযানের তুলনায় বেশি কষ্টকর। প্রকৃতপক্ষে পুরো সৌর জগৎ অতিক্রম করতে একটি মহাকাশযানকে যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে হয় তার চেয়ে বুধে অবতরণ করাতে হলে বেশি শক্তি দিতে হয়। বুধ গ্রহের উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত দুটি মহাশূন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আর তৃতীয় একটি অভিযানর প্রস্ততি চলছে। অভিজান গুলি হচ্ছে-

মেরিনার ১০

বুধ গ্রহ অভিযানে প্রেরিত প্রথম মাজাগতিক সন্ধানী যানের নাম “মেরিনার ১০”।. মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৭৩ সালের ৮ই নভেম্বর এই যান প্রেরণ করে। এটি ১৯৭৪ সালের ১৯শে মার্চ বুধের৭৫০ কিমি দূরত্বে গিয়ে পৌছায়। পরে ২১শে সেপ্টম্বর ১৯৭৪ এবং ১৬ই মার্চ ১৯৭৫ সালে বুধে সবচেয়ে কাছে পৌছায়। এজন্য “মেরিনার ১০” শুক্র গ্রহের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়েছে। মূলত শুক্রের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়ে “মেরিনার ১০” তার কক্ষীয় বেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বুধের দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে।

মহাকর্ষীয় স্লিংশট নামক এই প্রভাব “মেরিনার ১০”ই প্রথমবারের মত ব্যবহার করেছে। “মেরিনার ১০” প্রথমবারের মত বুধের অতি কাছ থেকে প্রচুর ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত মেরিনার ১০এর কক্ষীয় পর্যায় ঠিক বুধের ৩ নাক্ষত্রিক দিনের সমান ছিল। এর কারণে “মেরিনার ১০” যখনই বুধের কাছাকাছি হতে পেরেছে তখন সবসময়ই বুধের একটিমাত্র পৃষ্ঠ মহাকাশযানটির সামনে আসতে পেরেছে। ফলস্বরুপ বুধের সমগ্র পৃষ্ঠের মাত্র ৪৫% মানচিত্রের মাধ্যমে চিত্রিত করা সম্ভব হয়েছে।
সন্ধানী যানটি তিন তিনবার বুধের খুব সন্নিকটে যেতে পেরেছিল। এর মধ্যে নিকটতম ছিল বুধ পৃষ্ঠের ৩২৭ কিমি দূর পর্যন্ত। প্রথমবার কাছে যাওয়ার মাধ্যমে “মেরিনার ১০” বুধে একটি অভাবনীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। দ্বিতীয়বার যখন মেরিনার ১০ বুধ এর খুব সন্নিকটে যায় তখন বুধ পৃষ্ঠের প্রচুর ছবি তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু তৃতীয়বার নিকটবর্তী হওয়াটা ছিল আরও কার্যকরী। কারণ তখন গ্রহটির চৌম্বক ধর্ম সম্বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত জানা সম্ভব হয়। উপাত্তগুলো থেকে বোঝা যায়, গ্রহটির চৌম্বক ক্ষেত্র অনেকটা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মত যা গ্রহের চারপাশের সৌর বায়ুকে পথচ্যুত করতে পারে। শেষবারের মত বুধের সন্নিকটে যাওয়ার পর “মেরিনার ১০”-এর জ্বালানী প্রায় ফুরিয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবী থেকে এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। অবশেষে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অভিযানের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। মূলত পৃথিবী থেকে সংকেত দেয়া হয়েছিল যেন, “মেরিনার ১০” নিজেই নিজের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হয় “মেরিনার ১০” এখনও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং প্রতি কয়েকমাসে একবার করে বুধ গ্রহের সন্নিকটে যাচ্ছে।

মেসেঞ্জার

বুধের উদ্দেশ্যে নাসা কর্তৃক প্রেরিত দ্বিতীয় অভিযান ছিল মেসেঞ্জার। “MESSENGER” শব্দটি এসেছে – MErcury Surface, Space ENvironment, GEochemistry, and Ranging থেকে। এটি ২০০৪ সালের আগস্টের ৩ তারিখে প্রেরিত হয়। এই সন্ধানী যানটি বেশ কয়েকবার বুধের সন্নিকটে যেতে সমর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি বুধের চারদিকে নিজস্ব একটি কক্ষপথ তৈরীতে সমর্থ হয়। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং ২০০৭ সালের অক্টোবর ও জুন মাসে শুক্র গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে যায়। এই যানটি বুধের নিকট দিয়ে তিন তিনবার উড়ে যাবে বলে শিডিউল করা হয়েছে। এই উড়ে যাওয়ার সময়গুলো হবে জানুয়ারি ২০০৮, অক্টোবর ২০০৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০৯। এর পর তা ২০১১ সালের মার্চ মাসে বুধ গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে প্রবেশ করবে।

মেসেঞ্জারের ভ্রমণ পথ
মেসেঞ্জারকে পাঠানো হয়েছে মূলত বুধের ছয়টি মৌলিক বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য। এগুলো হচ্ছে:
১. বুধের উচ্চ ঘনত্ব,
২. এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস,
৩. এর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রকৃতি,
৪. এর কেন্দ্রের গঠন,
৫. এর মেরু অঞ্চলসমূহে আসলেই বরফ রয়েছে কিনা,
৬. এবং এর পাতলা বায়ুমণ্ডল কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
মেসেঞ্জার যখন বুধ গ্রহের চারপাশে দ্বিতীয়বারের মত প্রদক্ষিণ করে সে সময় অনেক কাছ থেকে বুধ গ্রহের ১২০০ এরও বেশী ছবি তোলা হয়৷ এসব ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা বুধ গ্রহ সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য জানতে পারছেন৷ তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বুধ গ্রহের ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ গর্ত।

বেপিকলম্বো

জাপান ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাথে যৌথভাবে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছে যা বেপিকলম্বো নামে পরিচিত। এই অভিযানে দুই সন্ধানী যান ব্যবহৃত হবে যারা বুধের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে। দুটি সন্ধানী যানের একটি বুধের মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করবে এবং অপরটি এর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। একটি ল্যান্ডার সহ মূল পরিকল্পনাটি করা হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার সয়ুজ রকেটসমূহ এই সন্ধানী যানটি বহনের কাজ করবে। মেসেঞ্জারের সাথেই বেপিকলম্বো বেশ কয়েকবার বুধের অতি সন্নিকটে যাবে। একইভাবে এটি চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের নিকট দিয়ে উড়ে গিয়ে বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করার পূর্ব বেশ কয়েকবার এর নিকটবর্তী হবে। আনুমানিক ২০১৯ সালের দিকে এটি বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করবে এবং প্রায় এক বছর ধরে একে অধ্যয়ন করবে। এই অভিযানটির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী গিউসেপ (বেপি) কলম্বোর (Giuseppe Colombo) নামানুসারে। তিনিই প্রথম সূর্যের সাথে বুধের কক্ষীয় রেজোন্যান্স নির্ণয় করেছিলেন।

ভবিষ্যতের মহাকাশ প্রযুক্তিঃ স্পেস এলিভেটর


মহাবিশ্ব জয়ের স্বপ্ন মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন।আমরা সৌরজগতের প্রায় সকল জায়গায়ই অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা এখনো যথেষ্ট উন্নত না হওয়ায় আমরা এখনো আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু করতে পারি নি।আর মহাশূন্য অভিযান অতিরিক্ত ব্যায়বহুল হাওয়ায় কোন সাধারন বেক্তির পক্ষে মহাকাশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নেওয়া প্রায় অসম্ভব।যদিও নাসা জানিয়েছে তারা হয়ত খুব তারাতারি সাধারন মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমনের সুযোগ  করে দিবে।হয়ত এত দিনে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ও হয়ে গিয়েছে।কিন্তু বাস্তবে তা এত বেশি  ব্যায়বহুল হবে যে তা খুবই কম সংখ্যক মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে।যাই হোক এবার আসল কথায় আসি,স্পেস এলিভেটর হল এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মুলত পৃথিবীকে কক্ষপথের সাথে ক্যাবল যোগে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।এই প্রযুক্তির ফলে হয়ত সাধারন মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমনের দ্বার উন্মুক্ত হবে।কারন এই প্রযুক্তি শুরু হলে এটি হবে খুবই কাজের ও অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

স্পেস এলিভেটর এর ধারনাতে পৃথিবীকে কক্ষপথের সঙ্গে ক্যাবল যোগে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।ফলে তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তির ব্যাবহারে মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ সহজতর হবে।যখন কোন বস্তু কক্ষপথের বাইরে ক্যাবল দ্বারা সংযুক্ত হবে, ক্যাবল এর ভরকেন্দ্র থাকবে জিওষ্টেশনারী কক্ষপথে(যে কক্ষপথে বিষুবরেখার উপর উপর স্থাপিত একটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সংগতি রেখে সদা ঘূর্ণায়মান রয়েছে,তাই এটিকে পৃথিবীর অনেকের কাছেই  একই জায়গায় স্থির মনে হয়)।.বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী কাবলের  দৈর্ঘ্য হবে ৫০০০০ থেকে ১০০০০০ কিলোমিটার।সাধারনত  মহাকাশযানগুলো একটি রকেট এর সাহায্যে উতক্ষেপন করা হয়। আর এটি একটি রকেটবিহীন মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ বেবস্থা । আর আশা করা যায় এটি আগামি ১০-২০ বৎসর এর মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হবে।এই  স্পেস এলিভেটর এর ধারণাটি পৃথিবীর সেরা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক (আমার সবচে প্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক) আর্থার চার্লস ক্লার্ক(C. clark) তার ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস "দ্যা ফাউন্তেন অফ প্যাঁরাডাইস " উপন্যাসে প্রথম প্রকাশ করেন।যাই হোক এটি হলে হয়ত অদুর ভবিষ্যতে আমরা না পারলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মহাকাশে যাবার সুযোগ পেলে পেতেও পারে!!

উল্কা ও উল্কাবৃষ্টি


রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় নক্ষত্রের মতো ছোট উজ্জল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায় আর এই নক্ষত্রগুলকে বলা হয় উল্কা। অনেকের ধারনা ধূমকেতুর বিচ্ছিন্ন অংশ উল্কা সৃষ্টির কারন। কিন্তু আসলে তা নয়। মহাকাশে অসংখ্য জড়পিন্ড ভেসে বেড়ায় ।এই জড়পিন্ডগুলো মাধ্যাকর্যণ ও অভিকর্ষ বলের আকর্ষনে প্রচন্ড গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে।পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে প্রবেশ করার পর বায়ূর সংস্পর্শে এসে বায়ূর সাথে ঘর্ষনের ফলে এরা জ্বলে উঠে।বেশীরভাগ উল্কাই মহাশূন্যে কিংবা বায়ুর সাথে ঘর্ষনের ফলে জ্বলে ছাই হয়ে যায়।এদের মধ্যে যেগুলো পৃথিবীতে আসে সেগুলোকে উল্কাপিন্ড বলে।প্রত্যেক বছর ই পৃথিবীপৃষ্ঠে উল্কাপাত হয়ে থাকে।প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিন্ড  প্রতিবছর পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে প্রবেশ করে ।উল্কাপিন্ড কোণাবিহীন এবং নানা আকারের হয়ে থাকে।বেশীরভাগের রং সাধারনত কালো।উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ূম্নডলে প্রবেশ তখন ই একে দেখা যায়।বায়ূম্নডলের মেসোস্ফিয়ার স্তরে এদেরকে দেখা যায়।উল্কাপিন্ড দৃষ্টিগোচর হয়   ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি.-১১৫ কিমি. এর মধ্যে।উল্কাপাতের ফলে আকাশে বর্নীল আলোকছ্ব্টার দেখা মেলে।

উল্কাপিন্ডঃ ভূপৃষ্ঠে পতিত হবার পর  উল্কাকে উল্কাপিন্ড বলে।৩ ধরনের উল্কাপিন্ড দেখা যায়-

১|পাথর সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড  যা খনিজ সিলিকেট দ্বারা গঠিত।

২|লোহা সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড যা লোহা-নিকেল  দ্বারা গঠিত।

৩|পাথর-লোহা সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড যা বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ ও পাথর   দ্বারা গঠিত।

বেশীরভাগ উল্কাপিন্ড ই পাথর এর যেগুলোকে কন্ড্রাইট এবং একন্ড্রাইট শ্রেনীতে ভাগ করা   হয়েছে।মাত্র ৬% উল্কাপিন্ড হচ্ছে লোহা এবং পাথর-লোহা দ্বারা তৈ্রী।

পৃথিবীতে পতিত হওয়া প্রায় ৮৬% উল্কাপিন্ড হল কনড্রাইট।এদেরকে কন্ড্রাইট বলা হয় কারন এগুলো ক্ষুদ্র ও গোলাকার পদার্থে তৈ্রী।এগুলো খনিজ সিলিকেট,আ্যমিনো এসিড দ্বারা গঠিত যা আকশে ভাসমান অবস্থায় গলিত রূপে থাকে।প্রায় ৮% উল্কাপিন্ড হল একন্ড্রাইট। কনড্রাইট অলিভাইন,পাইরোক্সিন,চুম্বক দিয়ে গঠিত।বেশীরভাগ এর বয়স ৪.৬ বিলিয়ন বছর। একন্ড্রাইট এক ই ধরনের পদার্থে তৈরী তবে পার্থক্য হল  এতে  গোলাকার  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা দেখা যায়না যা উত্তপ্ত উল্কাপিন্ডের গলিত পদার্থ ঠান্ডা হয়ে   তৈরী হয়।


উল্কাবৃষ্টি
রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় নক্ষত্ত্রের মত ছোট উজ্জল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায় আর তাই হলো উল্কাউল্কাবৃষ্টি ।রাতের আকাশে তারা গুনতে যেমন মজার তেমনি মজার উল্কাবৃষ্টি দেখা। মেঘহীন রাতের আকাশে আমরা হঠাৎ উল্কাপাত দেখি।ঝাঁকে ঝাঁকে ,দলে দলে উল্কা যখন পৃথিবীর দিকে ছুতে আসে তখন তাকে উল্কাবৃষ্টি বা উল্কাঝড় বলে।দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি উৎসবে মেতেছে।উল্কাপাতের ঘটনাকে বলা হয় "ইটা আ্যকুয়ারাইডস"।. প্রতি বছর সাধারনত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পযন্ত এই উল্কাঝড়ের দেখা পাওয়া যায়।পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এটি দেখা যায়না।উত্তর গোলার্ধের লোকজন প্রতি ঘন্টায় ১০ টি উল্কাপাত আর দক্ষিন গোলার্ধের লোকজন প্রতি ঘন্টায় ৩০ টি উল্কাপাত দেখতে পারে।বিষুবরেখার নিকট এলাকার লোকজন গোধলীর সময় দেখতে পারে ।বিষুবরেখার নিকটবর্তী এলাকার লোকজন সূর্যদয়ের ৩ ঘন্টা আগেই উল্কাবৃষ্টি দেখতে পারে।উল্কাবৃষ্টি দেখার সবচেয়ে ভাল সময় হলো সন্ধ্যা ও ভোররাত।

কেউ কেউ উল্কাবৃষ্টি দেখার সময় প্রার্থনা করে এই মনে করে যে তা পুর্ন হবে।

 
back to top