গল্পের লোকেশন ইন্ডিয়া। ইরফান খান (প্রাপ্ত বয়স্ক গল্প কথক পিসিং বা Pi Patel) তার এক লেখক বন্ধুকে তার জীবনের গল্প বলছেন। যেহেতু গল্প কথক তার জীবনের একমাত্র গল্পটি পুরু সিনেমায় বলেছেন এবং কথকের নাম ছিল Pi তাই সোজাসুজি সিনেমার নাম Life of Pi হয়ে গেল। এখানে কোনও মার-প্যাঁচ নেই। Picine Molitor Patel পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে Pi হয়ে যান তার স্কুলের সহপাঠীদের জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে। এই সামান্য যন্ত্রণা যে পাই সহ্য করতে পারত না তারই জীবনের ভয়ানক এক এডভেঞ্চার মুভিতে ফুটিয়ে তুলেছেন কানাডিয়ান পরিচালক অং লি।
১৯৫৪ সালের দিকে ইন্ডিয়ার পান্ডিচেরিতে সন্তুস প্যটেল নামের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন , সরকারী জমি লিজ নিয়ে তিনি একটি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে সরকারের সাথে কোনও একটা ঝামেলা হওয়াতে এবং আরও উন্নত জীবনের আশায় ঐ ব্যবসায়ী পরিবার (ব্যবসায়ী সন্তুস প্যটেল, ব্যবসায়ী স্ত্রী গীতা প্যটেল, রবি এবং পাই) চিড়িয়াখানার প্রাণী সহ একটি জাপানি জাহাজে করে কানাডায় পারি জমায়। তার পর সমুদ্রে ঝর সৃষ্টি হয় এবং ঘটনা ক্রমে পাই তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। সৌভাগ্য ক্রমে সে একটা শিপরেক পেয়ে যায় এবং সঙ্গি হিসেবে পায় একটি জেব্রাকে। বিপর্যয়ের মাত্রাটা এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ফোঁড়ের মধ্যে বিষফোঁড়া হয়ে শিপরেকের শেডের নিচ থেকে বের হয় এক হিংস্র হায়েনা। সে নানান রকম যন্ত্রণা শুরু করে শিপরেকের বাসিন্দা পাই এবং জেব্রাটিকে। সেই সময় সমুদ্র দিয়ে ভেসে আসে তাঁদের চিড়িয়াখানার আরেক পোষা প্রাণী অরেঞ্জ জুস নামের এক হনুমান। ঘটনা পরিক্রমায় হায়েনাটি জেব্রা এবং হনুমানটিকে মেরে ফেলে। ঠিক তখনই শেডের নিচে থেকে বের হয়ে আসে গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র রিচার্ড পার্কার নামের একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ছোট্ট এক শিপরেকে অকূল সমুদ্রের মাঝে পাই এবং রিচার্ড পার্কার নামের একটি বাঘ, বোঝেন অবস্থা!!!
শুরু হয় সার্ভাইবাল... অনেক আশা নিরাশার মধ্যে দিয়ে পুরু শ্বাসরুদ্ধ কর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সিনেমার কাহিনী চলতে থাকে। সে কাহিনী গুলো বলে ফেললে সিনেমা দেখার মজাটা খানিকটা হালকা হয়ে যেতে পারে।
পুরু সিনেমার একটা বড় অংশ জুড়ে জায়গা করে আছে সৃষ্টিকর্তাকে খোঁজার চেষ্টা। পাই একাধারে একজন হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ। সে সব ধর্মের বিধান(নামাজ, পূজা, চার্চে প্রার্থনা, প্রাণীর মাংস না খাওয়া) পালন করতে থাকে এবং নিজেকে পরিচয় দেয় একজন ক্যাথলিক হিন্দু হিসেবে। মুভিতে ধর্ম সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যেতে পারেন দর্শক। তাই বলা যায় সিনেমাটির দার্শনিক মূল্যও কম নয়। অনেক ম্যাসেজ রয়েছে এতে।
ছবির শুরুতে আনান্দি নামের একজনের সাথে প্রেমের কাহিনীর চুম্বকাংশ দেখানো হয়। তাই যারা রোমান্টিসিজম প্রেমি তাঁদের পিছুহটার দরকার দেখি না।
হলিউডকে এখন হলা হয় সব সম্ভবের কারখানা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন মুভিতে একটা নয়নাভিরাম ভাসমান দ্বীপের (আদতে একটা জ্যান্ত কারনিভোরাস) আভির্বাব ঘটে। সেখানকার দৃশ্য গুলো দেখার পরে যদি আপনার মনে হয় জুরাসিক পার্ক একটি কাঁচা হাতের কাজ তাহলে আপনাকে দুষ দেয়ার কেও থাকবে না।
সিনেমার একেবারে শেষে যখন কালো স্ক্রিনে ভেসে উঠে,
The making and legal distribution of this film supported over 14,000 jobs and involved over 600,000 work hours.
তখন বিষয়টি মেনে নিতে আপনার একটুও কষ্ট হবে না। বরং মনে মনে বলবেন, পরিচালক ব্যাটা কিছু কাজের সময় ব্যয় করেছে।
Life of Pi বইটির কথা আগেই শুনেছিলাম। সেটি নাকি বেষ্ট সেলার লিস্টে ছিল অনেক দিন পর্যন্ত। কিন্তু আমি শিউর, পরিচালক যা করেছেন এই সিনেমায় তাতে লেখকের চোখও ট্যাঁরা হয়ে যাবার কথা।
মুভিটি রিলিজ হয়েছে 3D ফর্মেটে। তবে HD ফর্মেটে ও রিলিজ হয়েছে।
জানা থাকা ভালো যে ছবিটির,
১. IMD রেটিং – ৮.2
২. পরিচালক: আং লি
৩. উপন্যাসে : ইয়ান মার্তেল
৪. স্ক্রিপ্ট : ডেভিড ম্যাজে
৫. অভিনয়: সুরজ শর্মা (প্রধান চরিত্র), ইরফান খান (প্রধান চরিত্র-গল্পকার রূপে), আদিল হুসেইন (পাই এর বাবা) , টাবু (পাই এর মা)
৬ . ঘরানা: এ্যাডভেঞ্চার + ড্রামা।
৭. রিলিজ ফরম্যাট: 3D
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য