Blogger Widgets

গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জঃ একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়


বিজ্ঞান নিয়ে যাদের একটু-আধটু জানাশোনা আছে তাদের সকলেই বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনকে চেনেন। আর তার ‘অরিজিন অব স্পিসিস’ সম্পর্কেও বলার প্রয়োজন নেই। ১৮৬৯ সালের ২৪শে নভেম্বর প্রকাশিত হওয়া তার এই বইয়ের বদৌলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদ্ভিদবিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের কেবল দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টায়নি, সমগ্র বিশ্বে তুলে দিয়েছিলো অস্তিত্বের মূল সন্ধানের ঝড়। সেই বইটির বহুলাংশে একটি দ্বীপের বর্ণনাই তিনি দিয়েছেন।
প্রকৃতিবিদ হিসেবে যখন তিনি ধীরে ধীরে খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেছিলেন আকস্মিকভাবেই তার জন্য সুযোগটা আসে। ইংল্যান্ডের রাজকীয় নৌবাহিনীর তৃতীয় জাহাজ, এইচ.এম.এস. বিগলে প্রকৃতিবিদ হিসেবে ভ্রমণের সুযোগ পান। প্রায় চার বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে ডারউইন গ্যালাপাগোসে আসেন।
গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ (ইংরেজি ভাষায়: Galápagos Islands; মূল স্পেনীয় নাম: Archipiélago de Colón) বেশ কিছু আগ্নেয় দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। দ্বীপের আবিষ্কার যদিও ১৫৩৫ সালে হয়, তারও তিন শতাব্দী পর্যন্ত কেউ এর ধারে কাছে ঘেঁষেনি। কারণ, জায়গাগুলো ছিলো দুর্গম ও ভয়ঙ্কর। একমাত্র তিমি শিকারি ও জলদস্যুদেরই আশ্রয়স্থল ছিল। প্রশান্ত মহাসাগরে বিষুব রেখার দুই পাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই দ্বীপগুলো মহাদেশীয় ইকুয়েডর থেকে ৯৭২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে, মূলত তার অনন্যসাধারণ জীববৈচিত্র্যের কারণে। গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ইকুয়েডরের গালাপাগোস প্রদেশের অন্তর্গত এবং দেশটির জাতীয় পার্ক সিস্টেমের অংশ। দ্বীপপুঞ্জের মানুষদের প্রধান ভাষা স্প্যনিশ।
এর খ্যাতি আরও একটি কারণে মানুষের মুখে মুখে ছিল। কারণটা ছিল এর অদ্ভুত প্রকৃতির ঢেউগুলো। কখনো এই ঢেউগুলো এতই তীব্র হয় যে, এর টানে জাহাজ-নৌকাগুলো প্রচন্ড গতিতে গ্যালাপাগোসের গায়ে আছড়ে পড়ত। আবার কখনো এই ঢেউগুলোই জাহাজ-নৌকাগুলোকে দূরসমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। এই অদ্ভুত আচরণের জন্য স্প্যনিশ নাবিকেরা এর নাম দিয়েছিল ‘পেন্ডিমোনিয়াম’ বা ‘নরকের স্বর্গ’ ।
এখানকার প্রাণীগুলো অন্যকোথাও তেমন একটা দেখা যায় না। বিষুবীয় অঞ্চলের উভয়পাশে দ্বীপগুলোর অবস্থান হবার কারণে সূর্যরশ্মি দ্বীপের সর্বত্র লম্বভাবে আপতিত হয়। যার ফলে দ্বীপের সবখানেই তীব্র গরম। পৃথিবীর মাঝে এই ধরণের স্থান খুবই কমই আছে।
দ্বীপগুলো পাশাপাশি অবস্থিত হলেও প্রত্যেকটির প্রাণীর মধ্যে প্রচন্ডরকম অমিল। ডারউইন এই অঞ্চলের বড় বড় কচ্ছপ, ইগোয়ানা, শীল, কাঁকড়া, ফিঞ্চ, পেলিক্যান, হরবোলা, প্রভৃতি প্রাণী লক্ষ্য করেন।
সবচেয়ে খ্যাতিমান হলো ফিঞ্চ। এগুলোকে ‘ডারউইনের ফিঞ্চ’ বলে অভিহিত করা। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে এই ধরণের পাখি খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে।
দ্বীপগুলোর মধ্য পারস্পরিক দূরত্ব ৭০-৮০ কি.মি. এর বেশি নয়। তার পরেও এদের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং বাস্তুতান্ত্রিক অসামঞ্জস্য অবাক করার মতোই। প্রত্যকটি উপাদানের মধ্যে স্বকীয় অভিযোজনের কারণ আজও অমীমাংসিত। ডারউইন তাঁর পাঁচ সপ্তাহের সফরে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তা নিয়ে আজো প্রকৃতিবিদরা নিমগ্ন।

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য

 
back to top