Blogger Widgets

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়করনের আন্দোলন

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু বের করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট উপকরণ সমূহ ব্যবহার করেন। কিন্তু তার সিংহ ভাগই ইংলিশ বা অন্যান্য ভাষায় লেখার দরুন সাধারণ বাংলা ভাষী মানুষ সেই সকল তথ্য এবং উন্নতি সম্পর্কে জানার থেকে অনেক পিছিয়ে। তাদের কে এই বিজ্ঞান ও নানা প্রযুক্তিক সম্পর্কে জানানোর জন্যই কৌতূহল।

বিজ্ঞান এর সাথে পড়ার আনন্দ যেখানে আলাদা

কল্পবিজ্ঞান থেকে প্রাচীন বিজ্ঞান সমস্ত ধরণের জনপ্রিয় বিজ্ঞানের লেখায় ভরা এই এই কৌতূহল। আছে বিভিন্ন রকম এর বিষয়। নানান রকম নতুন নতুন প্রযুক্তির খবরা-খবর। বিজ্ঞান এর ইতিহাস।

পড়ুন যেমন খুশি, যখন খুশি। পড়ান সবাই কে।

কৌতূহল হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রুপ ব্লগ। বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা ইন্টারনেটে যাতে এক জায়গায় কিছু লেখা পড়তে পারেন সেই উদ্দেশ্যে এই কৌতূহল তৈরি। আপনিও যুক্ত হতে পারেন কৌতূহল-এর সাথে।

বিজ্ঞানকে সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলো গল্পের ছলে বলে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানে উৎসাহী করা, মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক করা। দুর্বোধ্য ভাষায় তত্ত্বকথা না বলে বিজ্ঞানকে সহজ করে বোঝানো, এই উদ্দেশ্যে নিয়েই পথ চলা শুরু আমাদের।

মতামত জানান কৌতূহল-এর প্রতিটি লেখা ও অন্যান্য বিষয় কে আরও উন্নত করতে।

কৌতূহল-এর কথা জানিয়ে দিন আপনার পরিচিতদের কাছে Facebook, Twitter, email-র মাধ্যমে। কিংবা মুখেমুখে। কৌতূহল-এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে আমাদের দরজা খোলা।

সহস্র বছরের ৫টি বৈপ্লবিক আবিষ্কার


সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আমরা চশমাটা পড়ে নেই, এরপর রেডিও বা টেলিভিশন চালু করি এবং নিউজপেপারটা হাতে নিয়েই পড়া শুরু করি। এর মাঝেই কিন্তু আমরা গত ১০০০ বছরের ইতিহাসের তিনটি যুগান্তরি আবিষ্কারকে ব্যবহার করে ফেলেছি: চশমার লেন্স, তারহীন যোগাযোগ এবং প্রিন্টিং প্রেস। আমার মনে হয় সবার ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটে, তবে ঘুম থেকে উঠেই যাদের আমার মত চোখে সারাক্ষণ চশমা দিয়ে রাখতে হয় না তাদের অবশ্য লেন্সের ব্যবহারটার তেমন প্রয়োজন হয়না! যাই হোক আবার আসল প্রসঙ্গে আসি, এরপরই আমরা গাড়িতে করে স্কুল-কলেজ বা কাজে যাই, কম্পিউটারে কাজ করি, ফোন ব্যবহার করি – যার সবই গত ১০০০ বছরে বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর সব আবিষ্কার। গত এক সহস্র বছরে বিজ্ঞান এমন হাজারেরও বেশি আবিষ্কার আমাদের উপহার দিয়েছে যা ছাড়া এখন আমাদের জীবন কল্পনাই করা যায়না । কিন্তু প্রশ্ন হল কোন আবিষ্কারগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন? কোন আবিষ্কারগুলো বিজ্ঞানে নতুন মাত্র যোগ করেছে? কোনগুলো প্রযুক্তির নতুন ধারার সূচনা করেছে? আজ এমনই কিছু আবিষ্কার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।
বিদ্যুৎ

শুধু গত সহস্র বছরেরই নয়, বিদ্যুৎ নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা আবিষ্কার। বিদ্যুৎ না থাকলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম একটু ভাবুন তো? বিদ্যুৎ ছাড়া বর্তমান বিজ্ঞান কল্পনাও করা যায়না। শুধু বিদ্যুৎ কেন, বিদ্যুতের মাধ্যমে পরবর্তিতে যেসব যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় তার সবকটিই ইতিহাসের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। বিদ্যুৎ আবিষ্কারে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন থমাস আলভা এডিসন (Thomas Alva Edison)। তার বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই বিদ্যুতের আবিষ্কার। ১৮৮২ সালে এডিসনই প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে বিদ্যুতের উপর গবেষণা শুরু হয় ১৬ শতকের দিকে। ১৮ শতকের মধ্য দিকে আমেরিকান বিজ্ঞানী বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন (Benjamin Franklin) প্রথম বিদ্যুতের উপর ব্যবহারিক গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু এসময় নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না। শুধুমাত্র সাময়িক সময়ের জন্যই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেত। ১৮৪০ সালে আবিষ্কৃত টেলিগ্রাফাও ব্যাটারির মাধ্যমে চালানো হত। এরই মাঝে ফ্যারাডের একটি আবিষ্কারের সূত্র ধরেই ১৮৩১ সালে ডায়নামো আবিষ্কার করা হয়।
যান্ত্রিক ঘড়ি

আজ আমরা যে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করছি এর অনেকটা অবদানই হল ঘড়ির অর্থাৎ সময় গণনাকারী যন্ত্রের। কিন্তু যেই ঘড়ি ছাড়া আমাদের একটা দিনও চলেনা কখনো কী ভেবে দেখেছি এই ঘড়ি কে আবিষ্কার করেছে?
না, ইতিহাসেও এই মূল্যবান আবিষ্কারটির আবিষ্কারক হিসেবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়না। তবে সূর্য ঘড়ির ব্যবহার শুরু অনেক কাল আগে থেকেই। ধারণা করা হয় মিশরীয়রাই প্রথম প্রকৃতিনির্ভর অর্থাৎ সূর্য-ঘড়ি নির্মাণ করেছিল আর ১৪ শতাব্দীতে এসে ইউরোপিয়ানরাই এই তত্বের উপর ভিত্তি করে প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কার করেন।
কিন্তু ১৪ শতকের দিকে নির্মিত ঘড়িগুলোতে শুধুমাত্র ঘন্টা নির্দেশ করতে সক্ষম হত, মিনিট বা সেকেন্ড নির্ণয় করতে পারতোনা। তাছাড়া বর্তমান ঘড়ির দুই ঘন্টা ছিল সেই ঘড়ির হিসেবে এক দিন, যার মানে একদিনে ঘড়িটি মাত্র দুবার ৩৬০ ডিগ্রী কোণে ঘুড়তে পারতো। অর্থাৎ এই ঘড়ি দিয়ে সম্পূর্ণ নির্ভুল ও সূক্ষ সময় গণনা করা যেত না। অবশেষে ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিশ্চিয়ার হাইজেন্স (Christian Huygens) ১৬৫৭ সালে এসে সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে মিনিট, সেকেন্ড ও ঘন্টা নির্দেশকারী উন্নতমানের যান্ত্রিক ঘড়ির নকশা করেন।
কম্পাস

কম্পাস অর্থাৎ দিক নির্দেশক যন্ত্র সম্পর্কে সবারই কম বেশি জানা আছে। সূচালো শলার উপর সরু চুম্বকের পাত বসিয়ে কম্পাস তৈরি করা হয় যেখানে চুম্বকপাতের প্রান্ত দুটি সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে থাকে। বর্তমানে কম্পাস আর একটি প্রকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তৈরি হচ্ছে নানা রকম কম্পাস। যেমন: সাধারণ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয় পকেট কম্পাস, আকাশপথে ব্যবহৃত হয় জাইরো কম্পাস আবার নৌপথে ব্যবহৃত হয় নৌকম্পাস। আর এই কম্পাস আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছে বিশাল ইতিহাস।
ইউরোপিয়ানরা যখন প্রথম আমেরিকায় যাবার পরিকল্পনা শুরু করে তখনই তারা একটা দিক নির্দেশক যন্ত্রের অভাব অনুভব করে। তারা পরিস্কার দিনের আকাশের সূর্য কিংবা রাতের আকাশের নক্ষত্র বিশেষ করে নর্থ স্টার বা উত্তর নক্ষত্রের অবস্থান দেখে দিক নির্ণয় করতেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আকাশ পরিস্কার না থাকলে কিংবা ঝড় বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দিক নির্ণয় করা শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, অনেকটা অসম্ভব ছিল যা তাদেরকে কম্পাস আবিষ্কারে আরও উদ্বুদ্ধ করে। তার আগেই প্রাচীনকালের মানুষেরা ম্যাগনেট বা চুম্বকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিল যে ম্যাগনেট কে ঝুলিয়ে রাখলে এর এক প্রান্ত সর্বদা নর্থ স্টারের দিকে মুখ করে থাকে অর্থাৎ নর্থ স্টারকে নির্দেশ করে।
ধারনা করা হয় ১৩ শতকের দিকে ইউরোপিয়ানরাই এই তত্বের উপর ভিত্তি করেই কম্পাস বা দিক নির্দেশক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তবে এমন কথারও প্রচলন আছে যে আরবরাই প্রথম চীনাদের তত্ত্ব অনুসরণ করে কম্পাস আবিষ্কার করে কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া জায়নি। ১৪শতকের দিকে কম্পাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে তা একটা সাধারণ বিষয়েই পরিণত হয়।
বর্তমান বিজ্ঞান দিক নির্দেশনার জন্য হাজারো প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, জিপিএস এর কথায় হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা। তারহীন প্রযুক্তি দিক নির্দেশনাকে একটা ছেলেখেলাই বানিয়ে ফেলেছে কিন্তু এসবকিছুর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল এই সাধারণ একটা কম্পাসের মাধ্যমেই। এই কম্পাস ব্যবহার করেই ইউরোপিয়ানরা প্রথম আমেরিকা সফর করতে সক্ষম হন।
লেন্স

গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ
চশমা বা লেন্স এর ব্যবহার আজ একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই লেন্স না থাকলে যে আমার মত চশমা ব্যবহারকারীদের কী অবস্থা হতো কখনো কী কেউ ভেবে দেখেছেন? কিংবা যে ক্যামেরা দিয়ে আমরা হাজরো স্মৃতি সংরক্ষণ করি সেটাই বা কীভাবে আবিষ্কৃত হত? লেন্স আবিষ্কার না হলে প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারও বিলম্বিত হত।
ইতিহাসের মতে প্রথম যে লেন্স আবিষ্কৃত হয় তা শুধুমাত্র মানুষের চোখের জন্যই ব্যবহার করা যেত। ১৩ শতাব্দীর দিকে ইতালিতেই প্রথম মানুষের চোখে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত লেন্সের ব্যবহার শুরু হয়।তবে এখানেও ধারণা করা হয় যে ইতালিতে ব্যবহার করা এই উন্নত সংস্করণের চশমার পূর্বে চীনারাই প্রথম চশমার ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু মানের দিক থেকে ইতালিয়ানদের সংস্করণের তুলনায় চীনাদের সংস্করণটি নিম্নমানের হওয়ায় ইতালিই ইতিহাসে স্থান করে নেয়।
পরবর্তিতে দূরের বস্তুকে কাছে দেখার জন্য লেন্স আবিষ্কৃত হতে আরও ১০০ বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। এই আবিষ্কারে অবদান রাখেন ডাচ অপটিশিয়ান অর্থাৎ চশমা প্রস্তুতকারী হ্যানস লিপারশে (Hans Lippershey)। তিনি এটার নাম দেন “লুকার” (Looker) এবং ১৬০৮ সালে ডাচ সরকারকে তার এই লুকারের প্রমাণ দেখানোর কিছুদিনের মাঝেই বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তবে প্রথম প্রথম এই লুকার শুধুমাত্র ডাচ মিলিটারিতেই ব্যবহৃত হত।
এর এক বছর পরই অর্থাৎ ১৬০৯ সালে আকাশ নিয়ে গবেষণা করার জন্য গ্যালিলিও (Galileo) লুকারের একটি উন্নত সংস্করণ আবিষ্কার করেন। গ্যালিলিও এর নাম দেন টেলিস্কোপ যা দূরের কোন বস্তুকে ২০ গুণ বড় বা কাছে দেখাতে সক্ষম হত। ১৭ শতাকের দিকে হল্যান্ড লেন্স নিয়ে গবেষণায় অনেক এগিয়ে যায়। তবে ধারণা করা হয় এরও আগে ১৬ শতকের শেষের দিকে মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কৃত হয়।
১৬ শতকেই ডাচ প্রাণিবিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েনহোক (Antoni van Leeuwenhoek) তার নিজের তৈরি মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এবং প্রোটোজোয়ার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। পরবর্তিতে এই মাইক্রেস্কোপের মাধ্যম্যেই বিভিন্ন রোগের ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়।
তারহীন যোগাযোগব্যবস্থা

বর্তমানে বিজ্ঞান অনেকাংশই ওয়ারলেস কমিউনিকেশন বা তারহীন যোগাযোগব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট, মোবাইল, জিপিএস, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, ওয়াইম্যাক্স এসবই তারহীন যোগাযোগব্যবস্থার একেকটি রূপ যা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি কল্পনাও করা যায়না। আর এসবের শুরুটা হয়েছিল রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে। রেডিও ওয়েভ হল আলোক রশ্মি, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, ইনফ্রারেড রশ্মি এবং এক্সরে রশ্মিরই আরেকটি রূপ।
১৮৮৮ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হেনরিক হার্টজ (Heinrich Hertz) প্রথম রেডিও ওয়েভ আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে এই ওয়েভ আলোর গতিতে চলে। পরবর্তিতে ইতালিয়ান ইঞ্জিনিয়ার মার্কোনি (Guglielmo Marconi) হার্টজের গবেষণাকে তারহীন যোগাযোগব্যবস্থায় রূপান্তরিত করেন। ১৮৯৪ সালে হার্টজের গবেষণা সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা লাভ করে মার্কোনি এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও সম্ভাবনা উপলব্ধি করেন। ১৮৯৫ সালের শেষদিকে মার্কোনি একটি ট্রান্সমিটার ও রিসিভার আবিষ্কার করেন যা ২.৫ কিলোমিটার বা ১.৫ মাইল পর্যন্ত রেডিও সিগনাল পাঠাতে সক্ষম হয়। এরপর ১৯০১ সালে তিনি এর একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন যা গোটা আটলান্টিক মহাসাগরেই সিগনাল পাঠাতে পারতো।
১৯ শতকেই রেডিও সিগনাল এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯১২ সালে টাইটানিক বৃহৎ বরফ খন্ডে দুর্ঘটনায় পড়লে এই রেডিও সিগনালের মাধ্যমেই সাহায্যের আবেদন করে। যদিও ২২২০ যাত্রীর মাঝে শুধুমাত্র ৭০০ জনকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু ধারণা করা হয় রেডিও সিগনাল ব্যবহার না করল এই সংখ্যা আরও অনেক কম হত। এরপর রেডিও ওয়েভের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পায়। কানাডায় জন্ম নেয়া আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী ফেসেনডার (Reginald Fessender) রেডিও ওয়েভের এক অভিনব ব্যবহার আবিষ্কার করেন যার ফলে শব্দের পাশাপাশি ছবিও পাঠানো যেত। এই রেডিও সিগনালের তত্বের উপর ভিত্তি করেই ১৯২৮ সালে টেলিভিশন রিসিভার আবিষ্কার করা হয়। এর পরের ইতিহাস কেবলই রূপকথা। আমরা যে ইন্টারনেটে এখন লিখছি-পড়ছি তা এই রেডিও ওয়েভেরই উন্নত সংস্করণ।

পিস্তলের সাইলেন্সার যেভাবে কাজ করেপিস্তলের সাইলেন্সার যেভাবে কাজ করে


এটি সত্যিই কিছুটা অবাক করার মত যে, এমন কিছু রয়েছে যেটা একটি পিস্তলকে নিরব করতে পারে। তবে পিস্তলে সাইলেন্সার ব্যবহারের বিষয়টি আসলে খুব একটা অবাক করার মত কিছু নয়। এটি খুবই সহজ একটি নীতি অনুসরন করে কাজ করে। একটি ছোট উদাহরন দিলে কিছুটা ধারনা নেয়া যাবে। মনে করুন, আপনি একটি বেলুন পিন দিয়ে ফুটো করে দিলেন। তখন এটি প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হবে। কিন্তু যদি আপনি এর মুখের দিকটি খুলে দেন, তাহলে এটি থেকে বাতাস আস্তে আস্তে বের হয়ে যাবে এবং খুব একটা শব্দ করবে না। পিস্তলের সাইলেন্সার এর পিছনে এই মৌলিক ধারনাটিই মুলত কাজ করে।

পিস্তল থেকে একটি বুলেট নিক্ষেপ করার সময় বুলেটের পেছনে থাকা গান পাউডার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি খুবই উচ্চ চাপের গরম গ্যাসের একটি তড়িৎ প্রবাহ তৈরি করে যা বুলেটটিকে ব্যারেল দিয়ে তীব্র গতিতে বের করে দেয়। বুলেটটি যখন ব্যারেল থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যায়, তখন ব্যপারটি দাঁড়ায় অনেকটা বোতল থেকে কর্কের ছিপি খুলে দেয়ার মত। অর্থাৎ বুলেটের পেছনে থাকা গ্যাস তীব্র গতিতে বের হওয়ার ফলে ভয়াবহ শব্দের তৈরি হয়।

সাইলেন্সার যুক্ত করা পিস্তলে মুলত বুলেটটি বেরিয়ে যাবার পর, চাপযুক্ত গরম গ্যাস কিছুটা প্রসারিত হওয়ার জায়গা পায়। ফলে এটির চাপ অনেকটাই কমে যায় এবং যখন বুলেটটি বেরিয়ে যায়, তখন এর শব্দ হয় অনেক কম। তবে এই সাইলেন্সার কিন্তু পিস্তলের শব্দকে পুরপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। কিছুটা ভোতা হালকা একটি শব্দ হয়।
অনেকের মতে সুপারসনিক স্পীডে(শব্দের চেয়ে দ্রুত গতি) ছোটা বুলেটের শব্দকে সাইলেন্সার মোটেই কমাতে পারেনা। কারন এই ধরনের বুলেট ব্যারেল থেকে বেরিয়ে যাবার পর গতির কারনে এক ধরনের শব্দ তৈরি হয় যা নিয়ন্ত্রন করা যায় না। কারন সাইলেন্সার শুধুমাত্র বুলেট বেরিয়ে যাবার সময় সৃস্টিকারী শব্দ নিয়ন্ত্রন করতে পারে, বাতাসের মধ্য দিয়ে বুলেটের ছুটে যাবার শব্দকে নয়।

শব্দকে এক দিকে প্রবাহিত করার সফল প্রচেষ্টা


যদি এমন হয় যে ঘরের মধ্যে একটি ব্যান্ড সঙ্গিত চলে এবং বাইরের লোকজন এটা শোনবে না তবে বাইরের লোকে  যা বলবে তা সেই ঘরের লোক জন শোনতে পারবে তাহলে কেমন হয়? শব্দের একমুখি প্রবাহের এরকম ধারণা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন ইটালীর দুইজন বিজ্ঞানী। তারা প্রমান করতে সক্ষম হন যে শব্দকে ইচ্ছানুযায়ী পরিচালনা করা যায়।

শব্দ গবেষকদল এর জন্য একধরনের লেয়ার তৈরী করেছেন যাতে শব্দ প্রবেশ করে এবং তা প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। কিন্তু অপর দিকে থেকে আসা শব্দ সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
ইনসার্ভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কেসেটি জানান, এই ডিভাইজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যপকভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এটাকে শব্দ ডায়োড বলে আক্ষায়িত করেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রেও এটার ব্যবহার হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে,
The question is if that same nonlinearity can be created in acoustics,It’s perhaps less easy, but there are some attempts in the literature and I think it’s something that’s already being realized.

মাইক্রোওয়েভ ওভেন যেভাবে কাজ করে


প্রথম প্রথম খুব অবাক লাগত যে, আমি প্লেটে করে খাবার দিচ্ছি ওভেনে। খাবার গরম হচ্ছে, কিন্তু প্লেট গরম হচ্ছে না। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? কারণ ওভেন থেকে যে গরম বাতাস খাবারকে গরম করার কথা, তা তো একই সাথে প্লেটটিকেও গরম করার কথা! কিন্তু সেরকম তো হচ্ছে না!
যারা যন্ত্রটি সম্পর্কে সামান্য জানেন তারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন আমার উপরের ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল! ওভেনে আসলে এরকম কোনই যন্ত্র নেই যা থেকে কোন গরম বাতাস বের হয়ে খাবারকে গরম করে।
আসলে ‘মাইক্রোওভেন’ এই নামটিতেই অনেকটা এর কাজের মূলনীতি লুকানো আছে। কি? ধরতে পারলেন না? ইংরেজিতে ব্যাপারটি পরিস্কার বুঝতে পারবেন।
Micro + wave + oven = Microwave oven (যাকে আমরা সচরাচর ‘মাইক্রোওভেন’ নামে ডেকে থাকি)।


মাইক্রোওভেন এ আসলে মাইক্রোওয়েভস এর মাধ্যমে খাবার গরম করা হয়। সাধারণত 2500 মেগা হার্জ বা 2.5 গিগা হার্জ এর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় এসব যন্ত্রে। এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গ কেবলমাত্র জল, চর্বি এবং চিনি জাতীয় বস্তু দ্বারা শোষিত হয়। আর শোষিত হওয়া মাত্রই তরঙ্গটি আনবিক তাপগতিতে পরিণত হয় এবং বস্তুটিকে গরম করে। সিরামিক, গ্লাস এবং অধিকাংশ প্লাস্টিক এই তরঙ্গ শোষণ করতে পারে না, আর এই জন্যই ওভেনে পাত্র গরম হয় না এবং শক্তিরও অপচয় হয় না। এক ঢিলে দুই পাখি মারা আর কি।

Magnetron- যা মূলত ম্যাগনেটিক মাইক্রোওয়েব তৈরি করে


মাইক্রোওভেনে কখনও ধাতব পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি বলা হয়ে থাকে কারণ ধাতব পাত্র মাইক্রো ওয়েবকে প্রতিফলিত করে এবং খাবার কে গরম হতে বাধা দেয়।

Life of Pi মুভির কিছু কথা


গল্পের লোকেশন ইন্ডিয়া। ইরফান খান (প্রাপ্ত বয়স্ক গল্প কথক পিসিং বা Pi Patel) তার এক লেখক বন্ধুকে তার জীবনের গল্প বলছেন। যেহেতু গল্প কথক তার জীবনের একমাত্র গল্পটি পুরু সিনেমায় বলেছেন এবং কথকের নাম ছিল Pi তাই সোজাসুজি সিনেমার নাম Life of Pi হয়ে গেল। এখানে কোনও মার-প্যাঁচ নেই। Picine Molitor Patel পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে Pi হয়ে যান তার স্কুলের সহপাঠীদের জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে। এই সামান্য যন্ত্রণা যে পাই সহ্য করতে পারত না তারই জীবনের ভয়ানক এক এডভেঞ্চার মুভিতে ফুটিয়ে তুলেছেন কানাডিয়ান পরিচালক অং লি।
১৯৫৪ সালের দিকে ইন্ডিয়ার পান্ডিচেরিতে সন্তুস প্যটেল নামের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন , সরকারী জমি লিজ নিয়ে তিনি একটি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে সরকারের সাথে কোনও একটা ঝামেলা হওয়াতে এবং আরও উন্নত জীবনের আশায় ঐ ব্যবসায়ী পরিবার (ব্যবসায়ী সন্তুস প্যটেল, ব্যবসায়ী স্ত্রী গীতা প্যটেল, রবি এবং পাই) চিড়িয়াখানার প্রাণী সহ একটি জাপানি জাহাজে করে কানাডায় পারি জমায়। তার পর সমুদ্রে ঝর সৃষ্টি হয় এবং ঘটনা ক্রমে পাই তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। সৌভাগ্য ক্রমে সে একটা শিপরেক পেয়ে যায় এবং সঙ্গি হিসেবে পায় একটি জেব্রাকে। বিপর্যয়ের মাত্রাটা এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ফোঁড়ের মধ্যে বিষফোঁড়া হয়ে শিপরেকের শেডের নিচ থেকে বের হয় এক হিংস্র হায়েনা। সে নানান রকম যন্ত্রণা শুরু করে শিপরেকের বাসিন্দা পাই এবং জেব্রাটিকে। সেই সময় সমুদ্র দিয়ে ভেসে আসে তাঁদের চিড়িয়াখানার আরেক পোষা প্রাণী অরেঞ্জ জুস নামের এক হনুমান। ঘটনা পরিক্রমায় হায়েনাটি জেব্রা এবং হনুমানটিকে মেরে ফেলে। ঠিক তখনই শেডের নিচে থেকে বের হয়ে আসে গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র রিচার্ড পার্কার নামের একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ছোট্ট এক শিপরেকে অকূল সমুদ্রের মাঝে পাই এবং রিচার্ড পার্কার নামের একটি বাঘ, বোঝেন অবস্থা!!!
শুরু হয় সার্ভাইবাল... অনেক আশা নিরাশার মধ্যে দিয়ে পুরু শ্বাসরুদ্ধ কর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সিনেমার কাহিনী চলতে থাকে। সে কাহিনী গুলো বলে ফেললে সিনেমা দেখার মজাটা খানিকটা হালকা হয়ে যেতে পারে।
পুরু সিনেমার একটা বড় অংশ জুড়ে জায়গা করে আছে সৃষ্টিকর্তাকে খোঁজার চেষ্টা। পাই একাধারে একজন হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ। সে সব ধর্মের বিধান(নামাজ, পূজা, চার্চে প্রার্থনা, প্রাণীর মাংস না খাওয়া) পালন করতে থাকে এবং নিজেকে পরিচয় দেয় একজন ক্যাথলিক হিন্দু হিসেবে। মুভিতে ধর্ম সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যেতে পারেন দর্শক। তাই বলা যায় সিনেমাটির দার্শনিক মূল্যও কম নয়। অনেক ম্যাসেজ রয়েছে এতে।

ছবির শুরুতে আনান্দি নামের একজনের সাথে প্রেমের কাহিনীর চুম্বকাংশ দেখানো হয়। তাই যারা রোমান্টিসিজম প্রেমি তাঁদের পিছুহটার দরকার দেখি না।
হলিউডকে এখন হলা হয় সব সম্ভবের কারখানা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন মুভিতে একটা নয়নাভিরাম ভাসমান দ্বীপের (আদতে একটা জ্যান্ত কারনিভোরাস) আভির্বাব ঘটে। সেখানকার দৃশ্য গুলো দেখার পরে যদি আপনার মনে হয় জুরাসিক পার্ক একটি কাঁচা হাতের কাজ তাহলে আপনাকে দুষ দেয়ার কেও থাকবে না।

সিনেমার একেবারে শেষে যখন কালো স্ক্রিনে ভেসে উঠে,
The making and legal distribution of this film supported over 14,000 jobs and involved over 600,000 work hours.
তখন বিষয়টি মেনে নিতে আপনার একটুও কষ্ট হবে না। বরং মনে মনে বলবেন, পরিচালক ব্যাটা কিছু কাজের সময় ব্যয় করেছে।
Life of Pi বইটির কথা আগেই শুনেছিলাম। সেটি নাকি বেষ্ট সেলার লিস্টে ছিল অনেক দিন পর্যন্ত। কিন্তু আমি শিউর, পরিচালক যা করেছেন এই সিনেমায় তাতে লেখকের চোখও ট্যাঁরা হয়ে যাবার কথা।
মুভিটি রিলিজ হয়েছে 3D ফর্মেটে। তবে HD ফর্মেটে ও রিলিজ হয়েছে।

জানা থাকা ভালো যে ছবিটির,
১. IMD রেটিং – ৮.2
২. পরিচালক: আং লি
৩. উপন্যাসে : ইয়ান মার্তেল
৪. স্ক্রিপ্ট : ডেভিড ম্যাজে
৫. অভিনয়: সুরজ শর্মা (প্রধান চরিত্র), ইরফান খান (প্রধান চরিত্র-গল্পকার রূপে), আদিল হুসেইন (পাই এর বাবা) , টাবু (পাই এর মা)
৬ . ঘরানা: এ্যাডভেঞ্চার + ড্রামা।
৭. রিলিজ ফরম্যাট: 3D

 
back to top