Blogger Widgets

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়করনের আন্দোলন

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু বের করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট উপকরণ সমূহ ব্যবহার করেন। কিন্তু তার সিংহ ভাগই ইংলিশ বা অন্যান্য ভাষায় লেখার দরুন সাধারণ বাংলা ভাষী মানুষ সেই সকল তথ্য এবং উন্নতি সম্পর্কে জানার থেকে অনেক পিছিয়ে। তাদের কে এই বিজ্ঞান ও নানা প্রযুক্তিক সম্পর্কে জানানোর জন্যই কৌতূহল।

বিজ্ঞান এর সাথে পড়ার আনন্দ যেখানে আলাদা

কল্পবিজ্ঞান থেকে প্রাচীন বিজ্ঞান সমস্ত ধরণের জনপ্রিয় বিজ্ঞানের লেখায় ভরা এই এই কৌতূহল। আছে বিভিন্ন রকম এর বিষয়। নানান রকম নতুন নতুন প্রযুক্তির খবরা-খবর। বিজ্ঞান এর ইতিহাস।

পড়ুন যেমন খুশি, যখন খুশি। পড়ান সবাই কে।

কৌতূহল হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রুপ ব্লগ। বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরা ইন্টারনেটে যাতে এক জায়গায় কিছু লেখা পড়তে পারেন সেই উদ্দেশ্যে এই কৌতূহল তৈরি। আপনিও যুক্ত হতে পারেন কৌতূহল-এর সাথে।

বিজ্ঞানকে সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলো গল্পের ছলে বলে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানে উৎসাহী করা, মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক করা। দুর্বোধ্য ভাষায় তত্ত্বকথা না বলে বিজ্ঞানকে সহজ করে বোঝানো, এই উদ্দেশ্যে নিয়েই পথ চলা শুরু আমাদের।

মতামত জানান কৌতূহল-এর প্রতিটি লেখা ও অন্যান্য বিষয় কে আরও উন্নত করতে।

কৌতূহল-এর কথা জানিয়ে দিন আপনার পরিচিতদের কাছে Facebook, Twitter, email-র মাধ্যমে। কিংবা মুখেমুখে। কৌতূহল-এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে আমাদের দরজা খোলা।

Showing posts with label ইলেক্ট্রনিক্স. Show all posts
Showing posts with label ইলেক্ট্রনিক্স. Show all posts

বজ্রপাত এবং কিছু অজানা


বজ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটি। এটি মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ঙ্গকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর একটিও বটে। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার প্রায় সমান মাত্রার স্ফুলিঙ্গ আর ভয়াবহ গর্জন বহুকাল ধরেই মানুষের পিলে চমকানোর কাজটি দায়িত্বের সাথে পালন করে আসছে।।

বজ্রপাতের এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের মনে বিজ্ঞানের আরেকটি চিরন্তন রহস্যের জন্ম দেয়,বজ্রপাতের কারণ কি? ছোটবেলায় এই প্রশ্নের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা বেশিরভাগ সময় এ উত্তর পেয়েছি, মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলাফল হলো এই বজ্রপাত। এই ভুল ধারণার অবসান-ই লেখাটির উদ্দেশ্য।

পানিচক্রের নিয়মে জলাধারের পানি বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ আকারে আকাশে আশ্রয় নেয়। এই মেঘ-ই হল বজ্রপাতের ব্যাটারি। বজ্রপাতের জন্য দায়ী মেঘ বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মত আচরণ করে,যার উপরের অংশ পজিটিভ এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে চার্জিত থাকে। মেঘ কিভাবে চার্জিত হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বেশ মতভেদ থাকলেও সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে,পানিচক্রে জলকণা যখন ক্রমশ উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের দিকের বেশি ঘনীভূত বৃষ্টি বা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাষ্প কণা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়। এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয় এবং ইলেকট্রন হারানো পজিটিভ চার্জিত বাষ্পকণা মেঘের একেবারে উপরপৃষ্ঠে চলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর এর বৈশিষ্ট্য লাভ করে। মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।

এভাবে বাষ্পকণা ও মেঘে সংঘর্ষ চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেরে গিয়ে এতটা শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠের আরো গভীরে চলে যায়। ফলাফলস্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এখন বজ্রপাতের জন্য শুধু যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর। কিন্তু আমরা জানি বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী,তাহলে বজ্রপাত কিভাবে হবে?



মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়,যাকে বলে Dielectric Breakdown। মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয়(প্রতি ইঞ্ছিতে প্রায় ১০,০০০ ভোল্ট),তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়োনিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বাতাস আয়োনিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়।

সব উত্তর পাওয়া কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। তাহলে বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ কোথা থেকে আসে?এখানে আমরা পাঠ্যপুস্তকের জারন-বিজারন প্রক্রিয়ার ধারণা ব্যবহার করব। কোন ধাতুর সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াই হল জারন। আয়োনিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ার কারণে এতে ধাতব বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে বিদ্যমান। তাই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। এটাকে চাইলে আপনি প্রকৃতির welding ও বলতে পারেন

যেকোন রিমোট (TV/DVD/AC) ঠিক আছে কিনা জেনে নিন ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের মাধ্যমে





মোবাইল দিয়ে রিমোট ঠিক আছে কি না তা জানা । হয়ত শুনে অবাক লাগছে যে, এটা কিভাবে সম্ভব , কিন্তু এটি সত্য । আপনার বাসায়, অফিসে এবং অন্যান্য যায়গায় TV,VCR ও অন্যান্য যন্ত্রের রিমোট কন্ট্রোল বিভিন্ন যন্ত্র থাকে। ব্যাটারী নতুন বা ভালো থাকা সত্বেও মাঝে মাঝে দেখা যায় এগুলো কাজ করে না তখন আপনি বুঝতেই পারেন না যে সমস্যাটা কোথায় । তখন এই সামান্য সমস্যাটি নিয়ে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স সার্ভিসিং এর দোকানে যান ।
তবে এই টিপস আপনার অনেক কাজে লাগাতে পারেন । সমস্যাটা যদি আসলেই রিমোটেই হয় তবে একে পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না । সাধারণত এখন তো আমাদের সবার হাতেই ক্যামেরা যুক্ত মোবাইল ফোন থাকে , তাহলে সেই মোবাইলটাকেই কাজে লাগান ।
নিচের নিয়মাবলি লহ্ম্য করুনঃ প্রথমে আপনার মোবাইলের ক্যামেরা ON করেন তারপর সেই ক্যামেরাকে রিমোটের মাথায় অর্থাৎ যেখানে রিমোটের বাল্ব রয়েছে সেখানে অবস্থান করান । এই অবস্থায় রিমোটের যে কোন একটি বাটন প্রেস করুন এবং মোবাইলের স্ক্রিনে দেখুন । কি দেখাচ্ছে ? যদি সেখানে প্রেস করার সাথে সাথেই মোবাইলের স্ক্রিনে একটি উজ্জ্বল লাইট দেখায় তখন আপনি বুঝবেন যে আপনার আপনার রিমোট ঠিক আছে আর যদি উজ্জ্বল আলো না দেখায় তবে বুঝবেন যে সমস্যাটা আপনার রিমোটেই ।
[বিদ্রঃ তবে মনে রাখবেন যে উজ্জ্বল আলো নাও দেখাতে পারে যদি আপনার রিমোটের ব্যাটারী নষ্ট থাকে ]



সৌর কোষ কিভাবে কাজ করে?


সৌর বিপ্লবের কথা আমরা বেশ কিছু বছর যাবৎ শুনে আসছি, যার মূল মন্ত্র হল - এমন একদিন আসবে যখন আমরা বিনা খরচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করব। এই বিদ্যুতের মূল উৎস হল সূর্য। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, একটি রৌদ্রোজ্ঞ্বল দিনে সূর্য পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রতি বর্গ একক ক্ষেত্রফলে ১০০০ ওয়াট সমপরিমাণ আলোক শক্তি বিকিরণ করে!! যদি এই শক্তির পুরোটা সংগ্রহ করতে পারি তবে  আমরা আমাদের ঘরবাড়ি এবং অফিস আদালত প্রভৃতিকে সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুতায়িত করতে পারব।

ক্যালকুলেটর বা স্যাটেলাইটে যে সৌরকোষসমূহ আমরা দেখি সেগুলো হল  photo voltaic কোষ বা module (module হল একই ফ্রেমে অবস্থিত একগুচ্ছ কোষ যারা ইলেক্ট্রিকালি সংযুক্ত থাকে)। Photo অর্থ হল আলো এবং Voltaic মানে হল তড়িৎ। অর্থাৎ Photo voltaic cell বলতে বোঝায় আলোকতড়িৎ কোষ, যা আলোকশক্তিকে তড়িৎ-এ রূপান্তরিত করে।

আলোকতড়িৎ কোষসমূহ অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) পদার্থ দিয়ে গঠিত। বর্তমানে সিলিকন নামক অর্ধপরিবাহী বেশি ব্যবহৃত হয়। মূলত, যখন আলো এই কোষে এসে পড়ে তখন এই আলোর একটি নির্দিষ্ট অংশ অর্ধপরিবাহী কর্তৃক শোষিত হয়। এই আলোক শক্তি ইলেক্ট্রনকে পরমাণু হতে মুক্ত করে এবং ফলে ইলেক্টন গুলো স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। আলোকতড়িৎ কোষসমূহের প্রত্যেকের এক বা একাধিক তড়িৎক্ষেত্র থাকে যে বা যারা মুক্ত ইলেক্ট্রন গুলোকে একটি নির্দিষ্ট দিকে চলতে বাধ্য করে। এই ইলেক্ট্রনের প্রবাহই হল বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে। কোষগুলোর উপরে ও নিচে ধাতব পাত সংযুক্ত করে এই বিদ্যুৎকে বাইরে প্রবাহিত করা হয়।

ইহাই হল মূল প্রক্রিয়া, কিন্তু প্রকৃত ঘটনা আরও গভীর। একটি সিলিকন নির্মিত কোষ নিয়ে প্রকৃত ঘটনা আরও গভীরভাবে দেখা যাক -

সিলিকনের কিছু বিশেষ রাসায়নিক গুণাবলী রয়েছে। একটি সিলিকন পরমাণুতে ১৪ টি ইলেক্ট্রন রয়েছে, যারা ৩ টি ভিন্ন ভিন্ন শক্তিস্তরে সজ্জিত রয়েছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রথম দুটি স্তর ইলেক্টন দ্বারা পূর্ণ থাকে। সর্বশেষ স্তরটি অর্ধপূর্ণ থাকে, অর্থাৎ ৪ টি ইলেক্ট্রন থাকে। প্রতিটা সিলিকন পরমাণু সর্বদা শেষ স্তরটি পরিপূর্ণ করতে চায়, অর্থাৎ ৮ টি ইলেক্ট্রন অর্জন করতে চায়। এই উদ্দ্যেশে, প্রতিটি সিলিকন পরমাণু কাছাকাছি অবস্থিত চারটি পরমাণুর সাথে ইলেক্ট্রন শেয়ার করে। অর্থাৎ প্রতিটি পরমাণু পার্শবর্তী পরমাণুর সাথে বন্ধন গঠন করে। মনে হয় যেন, প্রতিটি পরমাণু চারটি হাত দিয়ে অপর চারটি পরমাণুকে ধরে রাখে। এভাবে স্ফটিকাকার কাঠামো গঠিত হয়, যা আলোকতড়িৎ কোষের জন্য প্রয়োজনীয়।

এতক্ষন আমরা বিশুদ্ধ সিলিকন স্ফটিক নিয়ে আলোচনা করলাম। বিশুদ্ধ সিলিকন মোটামুটিভাবে বিদ্যুৎ অপরিবাহী, কারণ এতে স্বাভাবিক অবস্থাতে কোন মুক্ত ইলেক্ট্রন নেই। সৌরকোষ হিসেবে এই সিলিকনকে ব্যবহার করতে হলে সিলিকন স্ফটিকে সামান্য পরিবর্তন সাধন করতে হয়।

একটি সৌরকোষে ভেজালযুক্ত বা অবিশুদ্ধ সিলিকন ব্যবহৃত হয়। সিলিকন পরমাণুসমূহের সাথে অন্য পরমাণু মিশ্রিত করে অবিশুদ্ধ সিলিকন প্রস্তুত করা হয়। ফলে এই সিলিকনের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়। সাধারনত আমরা ভেজালকে অনাকাংক্ষিত মনে করলেও, এক্ষেত্রে ভেজাল-ই কোষের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে এই ভেজাল ইচ্ছে করেই দেওয়া হয়। প্রতি মিলিয়ন সিলিকনের মধ্যে একটি করে ফসফরাস পরমাণুর উপস্থিতি বিবেচনা করা যাক। ফসফরাস পরমাণুর সর্ববহিস্থঃ স্তরে ৫ টি ইলেক্ট্রন রয়েছে। এই পরমাণুর চারটি ইলেক্ট্রন পার্শ্ববর্তী চারটি সিলিকনের সাথে আবদ্ধ থাকলেও একটি ইলেক্ট্রন মুক্তই থেকে যায়, যা কোন বন্ধনে আবদ্ধ থাকে না।

যখন বিশুদ্ধ সিলিকন শক্তিপ্রাপ্ত হয় (যেমন তাপ হতে প্রাপ্ত শক্তি), তখন কিছু ইলেক্ট্রন বন্ধন মুক্ত হয়ে তাদের পরমাণুকে ত্যাগ করে। প্রতিটি ইলেক্ট্রন ত্যাগের ফলে একটি করে হোল তৈরি হয়। এই ইলেক্ট্রনগুলো তখন সিলিকন স্ফটিকের মধ্যে অনবরত ছুটে বেড়ায় এবং হোল খুঁজে বেড়ায় তাতে পড়ার জন্য। এই ইলেক্তড়নগুলোকে মুক্ত বাহক বলে এবং এরাই বিদ্যুৎ পরিবহন করে। বিশুদ্ধ সিলিকনে এই ইলেক্ট্রনের সংখ্যা এতই কম যে তারা তড়িৎ পরিবহনে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনা। ফলে বিশুদ্ধ সিলিকন এক অর্থে বিদ্যুৎ অপরিবাহী। কিন্তু ফসফরাস যুক্ত ভেজাল সিলিকনের কথা আলাদা। এক্ষেত্রে ফসফরাসের বাড়তি ইলেক্ট্রনগুলো খুব অল্প পরিমাণ শক্তিতেই মুক্ত হয়ে যায়- কেননা এই ইলেক্ট্রনগুলো কোন বন্ধনে আবদ্ধ থাকে না। ফলে বিশুদ্ধ সিলিকনের তুলনায় ভেজাল সিলিকনে তড়িৎ পরিবহনের জন্য অনেক বেশি বাহক পাওয়া যায়।বিশুদ্ধ সিলিকনের সাথে ভেজাল মেশানোকে ডোপিং বলা হয়। যখন ফসফরাস মেশানো হয় তখন প্রাপ্ত ভেজাল সিলিকনকে N-type সিলিকন বলা হয়। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রন বাহক হিসেবে কাজ করে এবং ইহার চার্জ negative বলে "n"-type বলা হয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, ডোপিংকৃত সিলিকন বিশুদ্ধ ইলেক্ট্রনের চাইতে বেশ ভাল বিদ্যুৎ পরিবাহক।

প্রকৃতপক্ষে, সৌর কোষের এক অংশ হল N-type. অন্য অংশ বোরন দিয়ে ডোপিং করা হয়, যাকে P-type সিলিকন বলে। বোরনের সর্ববহিস্থঃ শক্তিস্তরে ৩ টি ইলেক্ট্রন রয়েছে। ফলে P-type সিলিকনে বাড়তি ইলেক্ট্রন থাকার পরিবর্তে বাড়তি হোলের সৃষ্টি হয়, যা তড়িৎ বাহক হিসেবে কাজ করে। ইলেক্ট্রনের অনুপস্থিতিই হল হোল, তাই হোলের চার্জ ইলেক্ট্রনের চার্জের বিপরীত অর্থাৎ positive। হোলের চার্জ positive বলেই "p"-type বলা হয়। হোলগুলোও ইলেক্ট্রনের মতই চলাচল করে।

আশ্চর্যজনক ঘটনা তখনই ঘটে যখন N-type এবং P-type সিলিকনকে একত্রে রাখা হয়। এই দুইধরণের সিলিকনকে সংযুক্ত করলে সংযোগস্থলে একটি তড়িৎক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই তড়িৎক্ষেত্র ছাড়া আলোক-তড়িৎ কোষ (Photovoltaic cell) কোনভাবেই কাজ করবে না। অর্থাৎ প্রতিটি আলোক-তড়িৎ কোষে কমপক্ষে একটি তড়িৎক্ষেত্র থাকতেই হবে।

এখন দেখা যাক N-type ও P-type সিলিকনকে সংযুক্ত করলে প্রকৃতপক্ষে কি ঘটে। N-type-এর মুক্ত ইলেক্ট্রনগুলো P-type-এর মধ্যে হোলগুলোকে খুঁজে পায় এবং খুব দ্রুত গিয়ে হোলগুলো পূর্ণ করে। ফলে সংযোগস্থলের N-type-এর দিকে positive charge এবং N-type-এর দিকে negative charge-এর সৃষ্টি হয়।এখন প্রশ্ন হলো যে, সকল মুক্ত ইলেক্ট্রন-ই কি হোলগুলোকে পূর্ণ করে। না, কেননা সংযোগস্থলে একটি তড়িৎক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় যার দিক এমন হয় যা কিনা N-type থেকে আরও ইলেক্ট্রনকে P-type-এর দিকে আসতে বাধা হিসেবে কাজ করে।ফলে একসময় একটি সাম্যাবস্থার সৃষ্টি হয় যখন সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র দুই পার্শ্বকে আলাদা করে রাখে।


এখন আমরা দেখব যে, এই অবস্থায় আলো পড়লে কি ঘটে। যখন ফোটন (আলোক কণা) সৌরকোষকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রন-হোল জোড়া ভেঙ্গে যায় এবং ফলে ইলেক্ট্রন মুক্ত হয়।পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তিবিশিষ্ট প্রতিটি ফোটন কেবলমাত্র একটি ইলেক্ট্রনকে মুক্ত করে এবং সেইসাথে একটি হোল-ও সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাটি যদি সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের কাছে ঘটে অথবা সৃষ্ট ইলেক্ট্রন ও হোল তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবযুক্ত অঞ্চলের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়, তবে তড়িৎক্ষেত্রটি N-type-এর দিকে একটি ইলেক্ট্রন এবং P-type-এর দিকে একটি হোল পাঠায়। এই অবস্থায় যদি বাইরে দিয়ে কোন সংযোগের ব্যাবস্থা করা হয়, তবে ইলেক্ট্রনগুলো সেই পথ দিয়ে P-type এলাকায় গিয়ে পৌঁছায় এবং হোল-এ এসে পড়ে। ইলেক্ট্রনের এই প্রবাহই তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে এবং কোষটির তড়িৎক্ষেত্র একটি বিভব পার্থক্য বজায় রাখে। তড়িৎপ্রবাহ এবং বিভব পার্থক্য-এই দুইয়ের সম্মিলনে Power পাই যাকিনা এদের গুণফলের সমান।


এখন প্রশ্ন হলো- এই আলোকতড়িৎ কোষ কি পরিমাণ সৌরশক্তি শোষণ করতে পারে? দুঃখজনক হলেও ইহা সত্য যে, বেশিরভাগ কোষ মোট সৌরশক্তির শতকরা মাত্র ২৫ ভাগ শোষণ করতে পারে।

সূর্যের আলোতে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো রয়েছে যাদের ফোটনের শক্তিও ভিন্ন ভিন্ন। যেহেতু সৌরকোষের উপর আপতিত আলোর ফোটনের শক্তি বিভিন্ন, তাই ইলেক্ট্রন-হোলযুগল সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত শক্তি সকল ফোটনের থাকেনা। যে আলো  ইলেক্ট্রন-হোলযুগল সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়, সেই আলো সৌরকোষকে অতিক্রম করে চলে যায়। কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির চেয়ে বেশি পরিমাণ শক্তি থাকলেই সেই ফোটন ইলেক্ট্রনকে মুক্ত করতে পারে। স্ফটিকাকার সিলিকনের জন্য এই শক্তির মান হলো 1.1eV (ইলেক্ট্রন ভোল্ট)।. শক্তির এই মানকে আমরা Band gap energy বলি। কোন ফোটনের যদি এই শক্তির চাইতে বেশি পরিমাণ শক্তি থাকে তবে উদবৃত্ত শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।এভাবে সৌরশক্তির শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হলো যে,আরও বেশি ফোটনকে কাজে লাগানোর জন্য কেন আমরা আরও কম band gap energy বিশিষ্ট পদার্থ ব্যবহার করিনা? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, band gap energy-ই সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের শক্তি নির্দেশ করে। অর্থাৎ কম band gap energy বিশিষ্ট পদার্থের দ্বারা সৃষ্ট কোষে বিভব পার্থক্যের মান নগণ্য হবে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। মোটামুটিভাবে 1.4eV শক্তিকে সৌরকোষের জন্য আদর্শ মান হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

সৌরকোষে ফোটনের শক্তি সংক্রান্ত অপচয় ছাড়াও আরও কিছু অপচয় রয়েছে। ইলেক্ট্রনগুলো কোষের বাইরের সংযোগ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কোষের নিচের অংশ ভাল তড়িৎপরিবাহিতার জন্য ধাতব পদার্থ দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু উপরের অংশও যদি পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়া হয়, তবে ফোটন অস্বচ্ছ তড়িৎপরিবাহী পদার্থ দিয়ে যেতে পারবে না এবং তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কিছুক্ষেত্রে স্বচ্ছ তড়িৎপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যদি আমরা ধাতব সংযোগ শুধুমাত্র দুই পাশে দেই তবে সংযোগস্থলে পৌঁছাবার জন্য ইলেক্ট্রনগুলোকে বেশ খানিকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। যেহেতু সিলিকনের রোধ বেশি এবং ইহা ধাতুর মত ভাল তড়িৎপরিবাহী নয় সেহেতু ইহার মধ্য দিয়ে বেশখানিকটা পথ অতিক্রম করা ইলেক্ট্রনের জন্য কঠিন হবে। ফলে অপচয় বেড়ে যাবে। এই অপচয় কমাবার জন্য ধাতব grid দ্বারা কোষগুলোকে মুড়ে দেওয়া হয়। ফলে ইলেক্ট্রনগুলোকে আর অধিক পথ অতিক্রম করতে হয়না।

আরও একটি সমস্যা রয়েছে। তা হলো- সিলিকন হলো একটি উজ্জ্বল পদার্থ। ফলে এতে আপতিত ফোটনের অনেকাংশ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। এই কারণে কোষটির উপরের অংশ অপ্রতিফলক পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।পরিশেষে কোষগুলোকে কাঁচের তৈরি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় যেন কোষ অন্যকোন পদার্থের সংস্পর্শে আসতে না পারে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিভব এবং বিদ্যুৎ পাবার জন্য বেশ কিছু কোষ (সাধারণত ৩৬টি) প্রয়োজন অনুযায়ী সংযুক্ত করে PV module তৈরি করা হয়। তারপর কাঁচের ঢাকনা দিয়ে পুরো module টিকে ঢেকে দেওয়া হয়।

ডিজিটাল ক্যামেরা


কয়েক বছর আগেও ক্যামেরায় ছবি উঠানোর জন্যে ক্যামেরার মধ্যে আমরা এক ধরনের ফিল্ম ব্যবহার করতাম । এইগুলোকে এনালগ ক্যামেরা বলা হয় । কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরায় কোনো ফিল্ম ব্যবহার করা হয় না ।এই জন্যে ডিজিটাল ক্যামেরাকে ফ্লিম লেস ক্যামেরাও বলা হয় ।

ডিজিটাল ক্যামেরায় এক ধরনের অপটিক্যাল সেন্সর ব্যবহার করা হয় । অপটিক্যাল সেন্সর অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোক-সংবেদনশীল ডায়োড  (ফটোসাইট) দিয়ে তৈরি। এই অপটিক্যাল সেন্সরের কাজ হল আমরা যেই বস্তুটির ছবি তুলব সেই বস্তু থেকে আসা আলোকে ইলেক্ট্রনিক চার্জে  রূপান্তরিত করা ।

বেশিরভাগ ডিজিটাল ক্যামেরায় ইমেজ সেন্সর হিসেবে  CCD(Charge Couple Device)  ব্যবহার করা হয়। আবার কিছু কিছু ক্যামেরায় ইমেজ সেন্সর হিসেবে  CMOS (Complementary Metal Oxide Semiconductor)  টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।  CCD এবং CMOS এর ইমেজ সেন্সর পদ্বতি সম্পূর্ন ভিন্ন ।

 
back to top